গত কয়েক মাসের তীব্র রোদ, তাপমাত্রা ও খরার কারণে অনেক কৃষকই আমন চাষ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার যারা বীজতলা তৈরি করেছিলেন তারাও সেচ পাম্প বসিয়ে আমন রোপণ করছিলেন। এমনই জুলাইয়ের তপ্ত রোদ ও খরার প্রভাবে নরসিংদীর অনেক কৃষক এ বছর আমন চাষ না করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আগস্টের শুরু থেকেই সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে বৃষ্টি শুরু হয়, যা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া সারাদেশের কৃষকদেরও দ্রুত আমন রোপনে উদ্বুদ্ধ করছে।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২২ আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ জমিতে আমন রোপন হয়েছে, যা জুলাইয়ের ২৫ তারিখে ছিল মাত্র ১০-১২ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে নতুন করে প্রায় ৪০ শতাংশ জমি চাষের আওতায় এসেছে। রোপণ মৌসুম চলবে এলাকা ভেদে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর তথ্যমতে, এ বছর ৫৯.৩৩ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তার মধ্যে নরসিংদী জেলায় ৪১.৫০ হাজার হেক্টর। বৃষ্টিনির্ভর ধান উৎপাদনের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মৌসুমে বড় কোন দুর্যোগ না হলে দেড় কোটি টন চাল উৎপাদন হয়।
তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মাঠের তথ্য আসতে কিছুটা সময় লাগে। তাদের কাছে মাঠের যে পরিস্থিতির বর্ণনা আসছে, তাতে করে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি জমিতে আমন রোপন শেষ হয়েছে। আর নরসিংদীর রায়পুরা,নরসিংদী সদর, মনোহরদী , শিবপুর, পলাশ সহ বেলাব উপজেলায় দ্রুত আমন চাষের পরিমাণ বাড়ছে বলে জানা গেছে।
রায়পুরার মুছাপুরের কৃষক হারুনুর রশিদ টিডিএমকে বলেন, 'এলাকার অনেকের মতো আমিও এবার আমন ধান চাষ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বৃষ্টি হওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত বদল করেছি এবং ইতিমধ্যে ১ বিঘার উপরে জমিতে আমন রোপন করেছি।'
গত মাসের তীব্র রোদ, তাপমাত্রা ও খরার কারণে অনেক কৃষকই আমন চাষ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার অনেকে সেচ পাম্প বসিয়ে আমন রোপন করছিলেন। কিন্তু সেচ পাম্পের মাধ্যমে আপন রোপন ব্যায়বহুল হওয়ায় হারটা ছিল খুবই ধীরগতির।
কৃষিকাজে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর তথ্য মতে, আমন মৌসুমে ৭০ শতাংশ কৃষক ধান রোপনে সরাসরি বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে। এবারে বৃষ্টির অভাবে যেসব কৃষক সেচ পাম্পের সঙ্গে চুক্তি করেছেন বা সেচে ধান লাগিয়েছেন বৃষ্টি এসে সেই নির্ভরতা কমিয়ে দিয়েছে।
রায়পুরার কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, বৃষ্টিটা আরো আগে হলে সেচ পাম্পের সঙ্গে চুক্তি করতে হতো না। তবে বৃষ্টি হওয়াতে চারার বৃদ্ধি ভালো হবে। ২-৩ বিঘা জমিতে আমন চাষ করবো।
কৃষকদের কাছে গত দুই সপ্তাহের নিয়মিত বৃষ্টি বড় আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এই বৃষ্টিতেই কৃষকরা দ্রুত জমি তৈরি করছেন এবং ধান রোপন করছেন। কৃষি অধিদপ্তর বলছে, ধারাবাহিক এই বৃষ্টির কারণে এবার আমন চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বৃষ্টিপাতের প্রভাবের একটা খন্ডচিত্র বুঝা যাচ্ছে। নরসিংদী কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নরসিংদী জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৫৩৩ হেক্টর জমিতে আমন রোপন করা হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশের উপরে রোপণ করা হয়েছে । যার বেশিরভাগই হয়েছে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে।
নরসিংদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হুমায়ুন কবির তালুকদার জানান, এবার বর্ষা একটু দেরিতে এসেছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গেলো ২০ দিনে ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী কয়েকদিনও বৃষ্টিপাত হবে তবে গেলো সময়ের চেয়ে কম। আগামী সপ্তাহে বৃষ্টিপাত বেশ বাড়তে পারে যা আমন চাষ আবাদের উপযোগী।
এছাড়া নরসিংদী কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতিটি উপজেলাতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত চারা বীজতলা রয়েছে। এ বছর আমন মৌসুমে বৃষ্টিও ভালো হচ্ছে । বৃষ্টির ফলে চারা দ্রুত বেড়েছে। আশা করছেন আমন চাষ নরসিংদীতে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন দাঁড়াবে।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর অতিরিক্ত উপপরিচালক(শস্য) মো. সালাউদ্দিন টিপু টিডিএমকে বলেন, 'বৃষ্টির কারণে আমন রোপন দ্রুত হচ্ছে। কৃষক বিকল্প সেচের মাধ্যমে চাষ শুরু করলেও বেশিরভাগই আসলে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় ছিল। এখন পর্যন্ত প্রায় লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশের উপরে ধান রোপন শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরের ১৫ পর্যন্ত আমন রোপণ করা যাবে।