বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১০৬ জন, এবং প্রতিবছর গড়ে নতুন ৫৩ জন করে ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ৩৮ ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন, মুখগহ্বর, পাকস্থলী, খাদ্যনালী ও জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক। ক্যান্সারজনিত কারণে দেশের মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ হয়ে থাকে।
এ সংক্রান্ত একটি বিস্তৃত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। জনসংখ্যাভিত্তিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, শনিবার, বিএসএমএমইউ-এর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে এক অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল “বাংলাদেশে ক্যান্সার পরিস্থিতি: জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রির তথ্যভিত্তিক প্রমাণ”।
গবেষণা শুরু হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর এলাকায়। প্রতিটি পরিবারে গিয়ে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং একটি বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত অনলাইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্যান্সার রেজিস্ট্রেশন করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে ওইসব পরিবারের ফলো-আপ শুরু হয়।
গবেষণায় মোট দুই লাখ মানুষের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে প্রতি এক লাখে ১০৬ জন ক্যান্সার রোগী। রোগীদের মধ্যে ৯৩% বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে, ২.৪% শিশু এবং ৫.১% বয়স ৭৫ বছরের ওপরে। পাঁচটি সবচেয়ে বেশি দেখা ক্যান্সার হলো: স্তন, মুখগহ্বর, পাকস্থলী, খাদ্যনালী ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার।
পুরুষদের মধ্যে সর্বাধিক দেখা ক্যান্সার হলো: খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ফুসফুস, মুখ ও গলা ক্যান্সার। নারীদের মধ্যে স্তন, জরায়ুমুখ, মুখগহ্বর, থাইরয়েড ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার শীর্ষে। পুরুষ রোগীদের মধ্যে ৭৫.৮% ধূমপায়ী এবং ৪০.৫% জর্দা, পান বা অন্যান্য চিবানোর তামাক ব্যবহার করেন। নারীদের মধ্যে ৬০.৬% চিবানোর তামাক ব্যবহার করেন। মোট ক্যান্সার রোগীর ৪৬% এর কারণ তামাক ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
রোগীদের মধ্যে ৬০% চিকিৎসা পেয়েছেন (সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি), এবং ৭.৪% কোনো চিকিৎসাই পাননি।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৮,৫৩৯ জনকে ফলোআপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে দেখা যায় প্রতি এক লাখে ৫২.৯ জন নতুন ক্যান্সার রোগী যুক্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দেখা নতুন ক্যান্সার হলো ফুসফুস (১৬.১%), লিভার (১২.৯%) ও গলার ক্যান্সার (১২.৯%)। পুরুষদের মধ্যে এই তিনটিই সর্বাধিক এবং নারীদের মধ্যে লিভার (২৩.১%), জরায়ুমুখ (১৫.৪%) ও খাদ্যনালী (১৫.৪%) ক্যান্সার বেশি দেখা যায়।
মৃত্যুর ক্ষেত্রে, দেশে ক্যান্সারজনিত কারণে মোট মৃত্যুর হার ১১.৯%। পুরুষদের মধ্যে মৃত্যুর শীর্ষ কারণ ফুসফুস (১৯.০%) ও গলার ক্যান্সার (১৪.৩%), আর নারীদের মধ্যে স্তন ও পাকস্থলীর ক্যান্সার (দুটি ক্ষেত্রেই ১৪.৩%)।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে গবেষণাটি অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয় এবং গবেষকদের এই ডেটা ব্যবহার করে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা পরিচালনার আহ্বান জানানো হয়। গবেষণাটি বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (NCDC), বিএসএমএমইউ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
স্টাফ রির্পোটার
সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন