ঢাকা | |

বাংলাদেশকে বৈশ্বিক উৎপাদন ঘাঁটি করার আহ্বান: ড. ইউনূস

বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনা উদ্যোক্তাদের
  • আপলোড সময় : ১ জুন ২০২৫, বিকাল ৫:৫০ সময়
  • আপডেট সময় : ১ জুন ২০২৫, বিকাল ৫:৫০ সময়
বাংলাদেশকে বৈশ্বিক উৎপাদন ঘাঁটি করার আহ্বান: ড. ইউনূস
বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনা উদ্যোক্তাদের দেশটিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক উৎপাদন ঘাঁটি হিসেবে রূপান্তরের এখনই উপযুক্ত সময়।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে বাংলাদেশ-চীন যৌথ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “আমরা আজ একসাথে একটি নতুন যাত্রা শুরু করছি। বাংলাদেশে যে বিশাল সম্ভাবনার ভান্ডার রয়েছে, তা কাজে লাগাতে আমি আপনাদের আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি। তৈরি পোশাক, ওষুধ, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট, মৎস্য এবং তথ্যপ্রযুক্তিসহ প্রতিটি খাতেই বিনিয়োগের অপার সুযোগ রয়েছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, “চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের অর্থনীতিকে বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশ-চীন অংশীদারিত্বের এই উদ্যোগ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। আমরাও চাই, এ বিনিয়োগ আমাদের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসুক।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, বর্তমান প্রশাসন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে একাধিক নীতিগত সংস্কার বাস্তবায়ন করছে। ব্যবসার প্রক্রিয়া সহজীকরণ, প্রশাসনিক জটিলতা দূরীকরণ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধানে বিডাকে শক্তিশালী করা হয়েছে। “আমরা ইতোমধ্যেই রিলেশনশিপ ম্যানেজার নিয়োগ করছি এবং প্রতি মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রাতরাশ সভার আয়োজন করছি,” বলেন তিনি।

গত এপ্রিল মাসে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের সফল আয়োজনের প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন, “বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণে পাঁচদিনব্যাপী এই আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিনিধিদলটি এসেছিল চীন থেকে। সেই সময়ে একটি শীর্ষস্থানীয় চীনা টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান কেবল স্পিনিং খাতে ১০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।”

বাংলাদেশের জনশক্তির প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন, “১৮ কোটির অধিক জনগণের মধ্যে অর্ধেকের বেশি তরুণ — এ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। অথচ অতীতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আমরা ব্যর্থ ছিলাম। গড়ে তোলা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো যথাযথ ব্যবহারের অভাবে অনুন্নত রয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “জুলাই মাসের গণবিপ্লবের মাধ্যমে যে গণতান্ত্রিক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তার পরবর্তীতে গঠিত সরকার বিডাকে একটি দক্ষ ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠন করেছে। দুর্নীতি ও শাসন ব্যর্থতার কারণে যে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, তাদের আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি।”

চীনা প্রতিনিধিদলের আগমনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সুদীর্ঘ বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সম্মেলন আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। আপনাদের উপস্থিতি আমাদের পারস্পরিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে।”

বেইজিং সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, “চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে আমি চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আমি গর্বিত যে, তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য পরিবর্তনের হাওয়া বয়ে আনতে পারে।”

পাট ও মসলিনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একসময় পাটের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাত ছিল। এখন সময় এসেছে এই প্রাকৃতিক তন্তুর নতুন করে ব্যবহার শুরু করার। পাট কেবল বস্তার উপাদান নয়, বরং পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবেও এর বহুমুখী সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকাই মসলিনের গৌরব পুনরুদ্ধারও আমাদের সংস্কৃতি ও অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

সম্মেলনে চীনের শতাধিক কোম্পানির প্রায় ২৫০ জন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশ নেন। চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: স্টাফ রির্পোটার।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স