দেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারিত হলো জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)-তে। আজ রবিবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে সম্প্রচারের সূচনা হয়, যেখানে ২০২৪ সালের ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে’ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) পেশ করা হয়।
আদালতের সম্মতিক্রমে এই ঐতিহাসিক বিচারিক কার্যক্রম শুধু বিটিভিতেই নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেইজ এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ১৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগনামা বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচার বেঞ্চে উপস্থাপন করেন। বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনা ছাড়াও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন টিমের অন্যান্য সদস্য, যেমন আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম, তাদের বক্তব্যে অভিযুক্তদের ‘গণহত্যার রূপকার’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, "শেখ হাসিনা ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু—এই সংঘবদ্ধ অপরাধের প্রধান কুশলী। তিনি ছিলেন অপরাধীদের অনুপ্রেরণার উৎস।"
গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে, যেখানে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত বর্বর হত্যাযজ্ঞের পেছনে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ ভূমিকার কথা উঠে আসে। আজ সেই প্রতিবেদনই আনুষ্ঠানিক অভিযোগে রূপ পেয়েছে।
২০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির সংযোজন সম্পন্ন হয়, যার ফলে বিচারিক কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার বা ধারণ করে প্রচারের অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আজকের বিচার কার্যক্রম বহুজনের সামনে উন্মুক্ত হলো।
আইনজীবীরা মনে করছেন, এই সরাসরি সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়বে। অনেকেই একে ‘বিচারব্যবস্থার এক নতুন দিগন্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
জুলাই মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে সংঘটিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক সংগঠনের ক্যাডাররা নির্বিচারে হামলা চালায়। এ ঘটনায় নিহত, নিখোঁজ ও নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক সরকারপ্রধানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের একটি বড় অংশ বর্তমানে গ্রেফতার হয়ে বিচারিক হেফাজতে রয়েছেন এবং ধার্য তারিখ অনুযায়ী আদালতে হাজির করা হচ্ছে।