যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে একাধিক ফেডারেল সংস্থায় গণছাঁটাই কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে রায় দিয়েছে দেশটির ফেডারেল আপিল আদালত। শুক্রবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ৯ম সার্কিট কোর্ট অব আপিলস এই রায় প্রদান করে।
ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের এক পূর্ববর্তী আদেশ স্থগিতের আবেদন করেছিল, যাতে এক ডজনেরও বেশি সরকারি সংস্থায় গণছাঁটাই কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়। তবে আপিল আদালত তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।
আদালতের নতুন এই রায় ট্রাম্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফেডারেল সরকারকে ছোট করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং তার অংশ হিসেবেই এই ছাঁটাই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। তবে চলতি বছরের ৯ মে, যুক্তরাষ্ট্রের জেলা বিচারক সুসান ইলস্টন রায় দেন যে, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্ট এত বড় পরিসরে সরকারি পুনর্গঠন করতে পারেন না।
রায়ে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ "সংবিধানের অধীনে প্রেসিডেন্টের তত্ত্বাবধায়ক ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।" আদালতের মতে, বাদীদের যুক্তি যথেষ্ট শক্তিশালী এবং প্রশাসন জরুরি হস্তক্ষেপের যৌক্তিকতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, “একজন বিচারক নির্বাহী শাখার নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের ক্ষমতা দখল করতে চাচ্ছেন, যা অসাংবিধানিক।” হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস আরও বলেন, প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা থামাতে বিচার বিভাগের ক্ষমতা অপব্যবহার করা হচ্ছে এবং তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।
মামলাটি দায়ের করেছে ফেডারেল কর্মচারীদের ইউনিয়ন, স্থানীয় সরকার এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন। তারা ট্রাম্পের ফেব্রুয়ারি মাসে জারিকৃত নির্বাহী আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছে, যেখানে সরকার পুনর্গঠনের এবং গণছাঁটাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তারা অভিযোগ করে, অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট ও অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট মূলত চূড়ান্ত ছাঁটাই পরিকল্পনা নির্ধারণ করছিল এবং সংস্থাগুলোর বিকল্প প্রস্তাব খারিজ করছিল, যা আইনবিরুদ্ধ।
মামলার আওতায় পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান মন্ত্রিপরিষদ-স্তরের সংস্থা, যেমন প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, জ্বালানি, শ্রম, স্বাস্থ্য ও মানবসেবা, বিচার, পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়। রায়ে সিনিয়র বিচারপতি উইলিয়াম ফ্লেচার বলেন, “এ ধরনের পুনর্গঠনের জন্য ঐতিহাসিকভাবে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন।” তার সঙ্গে একমত হন বিচারপতি লুসি কোহ। তবে ভিন্নমত পোষণ করেন বিচারপতি কনসুয়েলো মারিয়া ক্যালাহান, যিনি মনে করেন প্রেসিডেন্ট সংস্থাগুলোর বৈধ আরআইএফ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দিতে পারেন। মামলাকারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এই ক্ষতিকর পদক্ষেপগুলো বন্ধ রাখার জন্য আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।”