মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ইরান উন্মোচন করেছে একটি নতুন ও অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ‘শাহান’। ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম এই জাহাজে সংযুক্ত করা হয়েছে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যার মধ্যে রয়েছে ‘সৈয়দ-থ্রি’ এবং ‘নবাব’ মডেলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি।
ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহারাম ইরানি বলেন, “আমাদের নৌবাহিনী এখন শত্রুর প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করেছে। ধারাবাহিক নৌ অভিযানের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের অপারেশনাল ক্ষমতা নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।”
তিনি আরও জানান, নতুন যুদ্ধজাহাজের মাধ্যমে ইরান তার সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ সক্ষমতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জাহাজটির উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে শত্রুর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তৎক্ষণাৎ ধ্বংস করা সম্ভব হবে।
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘কাশেম বশীর’
নৌ শক্তির পাশাপাশি, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) সম্প্রতি উন্মোচন করেছে ‘কাশেম বশীর’ নামের একটি নতুন দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি ১২০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়েছে। ইরান জানিয়েছে, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিতে সংরক্ষিত রয়েছে।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে বলেন, “২০২৪ সালের এপ্রিল ও অক্টোবর মাসে যেসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল, কাশেম বশীর তার তুলনায় বহুগুণ বেশি শক্তিশালী। যদি ইসরাইলের বিরুদ্ধে একযোগে ২০০টি কাশেম বশীর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, তবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বড়জোর পাঁচটি প্রতিহত করতে পারবে।”
উত্তেজনা বাড়ছে
সম্প্রতি ইসরাইলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের একটি ড্রোন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। ঘটনার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুথি ও তাদের মিত্র ইরানকে পাল্টা হামলার হুমকি দেন। এর জবাবে ইরানও তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়।
ইরানের বিমান বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদ ভায়েদী বলেন, “আমাদের বিমান বাহিনী কেবল একটি যুদ্ধ ইউনিট নয়, বরং জাতীয় প্রতিরক্ষার প্রথম সারির শক্তি। আমরা যেকোনো দূরবর্তী হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধে এখন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই সামরিক প্রদর্শনী ও কঠোর ভাষ্য বিশ্ব কূটনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের শক্তি প্রদর্শন কেবল ইসরাইল নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোকেও সতর্ক অবস্থানে নিয়ে যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘মেহের নিউজ এজেন্সি’ ২০২৫ সালের ৭ মে এই তথ্যগুলো প্রকাশ করে।