স্টাফ রির্পোটার
কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর প্রাণঘাতী হামলার পর ভারতের সাথে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কার মধ্যে পাকিস্তান ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের প্রশিক্ষণ উৎক্ষেপণ পরিচালনা করেছে।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে গত মাসে এক মারাত্মক গুলিবর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী ভারতের সাথে উত্তেজনা তুঙ্গে থাকা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে তারা একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, শনিবার এক মহড়ার অংশ হিসেবে ৪৫০ কিলোমিটার (২৮০ মাইল) পাল্লার ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য এই ক্ষেপণাস্ত্রটির সফল পরীক্ষা করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে যে, "এই উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ছিল সৈন্যদের অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম এবং উন্নত ম্যানুভারেবিলিটি বৈশিষ্ট্য সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত পরামিতি যাচাই করা"। প্রচলিত এবং পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম এই কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করা হয়েছে ১৮ শতকের আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শাহ আবদালির নামে, যিনি ভারতীয় উপমহাদেশে অসংখ্য আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং সফল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পিছনে থাকা ব্যক্তিদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলার তিন দিন পর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হলো, ইসলামাবাদের কাছে "বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য" আছে যে ভারত গত মাসে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ২৫ জন পুরুষ পর্যটক এবং একজন কাশ্মীরির হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে । ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই সমগ্র কাশ্মীর অঞ্চলের উপর দাবি করে , কিন্তু এর কিছু অংশের উপর তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এই ইস্যুতে তাদের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
নয়াদিল্লি ২২ এপ্রিলের মনোরম পহেলগাম এলাকায় সন্দেহভাজন কাশ্মীরি বিদ্রোহীদের দ্বারা সংঘটিত হামলায় ইসলামাবাদের মদদ থাকার অভিযোগ করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে পাকিস্তানি নাগরিকরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। পাকিস্তান এই হামলায় কোনও জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন যে তিনি তার সেনাবাহিনীকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য "পূর্ণ কার্যক্ষম স্বাধীনতা" দিয়েছেন এবং "পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত" যারা এই আক্রমণে সমর্থন করেছিল তাদের তাড়া করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পাকিস্তানি মন্ত্রী তারার বলেন, ভারতীয় নেতারা পাহেলগাম হামলাকে "মিথ্যা অজুহাত" হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানে সম্ভাব্য আক্রমণ করতে চান। শুক্রবার, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির "বর্তমান পাকিস্তান-ভারত অচলাবস্থা" নিয়ে তার শীর্ষ কমান্ডারদের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, একটি সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে। মুনির "সকল ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং সক্রিয় প্রস্তুতি বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন"।
কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের উপর বছরের পর বছর ধরে সবচেয়ে মারাত্মক এই হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক সমালোচনা ও বহিষ্কার করেছে এবং সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত পাকিস্তানের সাথে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তিতেও তার অংশগ্রহণ স্থগিত করেছে।
দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ কাশ্মীরকে বিভক্তকারী কার্যত সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবরও গুলি বিনিময় করেছে, অন্যদিকে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে , যা এলওসিকে ভিত্তি করে। ভারত-শাসিত কাশ্মীরের মানুষ দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ।
সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন
