টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সোমবার (১০ জুন) রাত ৮.৩০মিনিটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ, প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। সবে নিউ ইয়র্কে পৌঁছানো বাংলাদেশ দলের চেয়ে একটি জায়গায় বেশ এগিয়েই থাকার কথা দক্ষিণ আফ্রিকার।
কারণ সেখানকার নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে এরই মধ্যেই দু-দুটো ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে প্রোটিয়াদের। বেশ অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কথা তাদের। কিন্তু ‘ডি’ গ্রুপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়ার আগে কি সেই এগিয়ে থাকার দাবিটা খুব জোর গলায় করতে পারছে এইডেন মারক্রামের দল? একদমই না।
কারণ নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামের ড্রপ ইন পিচ প্রোটিয়াদের জন্যও রীতিমতো এক গোলকধাঁধাই হয়ে আছে। তাদের মতো ভারতীয় দলও নিউ ইয়র্কে বেশ কয়েক দিন ধরে উইকেট রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি।
শুরুতে যদিও মনে করা হয়েছিল যে এই মাঠে টস জিতে প্রতিপক্ষকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়াই জয়ের নিশ্চয়তা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা দুটি ম্যাচের দিকে তাকালে ভোগান্তিও কম দেখা যায় না।
শ্রীলঙ্কাকে ৭৭ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পরও খুব অনায়াসে জেতা হয়নি প্রোটিয়াদের। নেদারল্যান্ডসের ১০৩ রান পেরোতে গিয়ে ৬ উইকেট খুইয়ে কোনোমতে জিততে হয়েছে তাদের।
এত দিনের অভ্যস্ততা সত্ত্বেও জিততে কঠিন পথই পাড়ি দিতে হয়েছে মারক্রামদের। এই যখন অবস্থা, তখন আজ বাংলাদেশের সামনেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফেভারিট বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আয়োজকরা যদিও উইকেটের মান বাড়ানোর চেষ্টায় উদ্যোগী হয়েছেন বলে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন। কিন্তু এত অল্প সময়ে কতটা কী করা গেল, গত রাতের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে সে প্রশ্নের উত্তর কিছুটা পাওয়া গিয়ে থাকতে পারে। যদিও রোহিত শর্মা ভালো কিছুর আশায় না থেকে সেখানে অন্য পথ ধরাকেই ধ্যান-জ্ঞান করেছেন।
পাকিস্তান ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে চার-ছক্কার চেয়ে সিঙ্গেলস-ডাবলসের ওপর খেলার মতো ‘স্মার্ট’ উপায়ের কথাই বলেছেন ভারত অধিনায়ক, যা দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হওয়ার আগে বাংলাদেশকেও দিয়েছে আগাম বার্তা।
এমন নয় যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডালাসে হেসে-খেলে জিতেই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছে নাজমুল হোসেনের দল। জিতে অবশ্য ভালো সময়ের ঘূর্ণাবর্ত থেকে কিছুটা হলেও বেরিয়ে এসেছেন তাঁরা। আত্মবিশ্বাস মজুদ হয়েছে অনেকখানি। রিশাদ হোসেনের মতো একজন লেগস্পিনারের উত্থান বোলিং আক্রমণে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে মারা টানা তিন ছক্কায় তাওহিদ হৃদয় মিডল অর্ডারে ভরসা এনে দিয়েছেন। বুড়িয়ে যাওয়া মাহমুদ উল্লাহও ‘ফিনিশ’ করে আসতে পারার নমুনা রেখেছেন। ডালাসের উইকেটে দারুণ বোলিং করা মুস্তাফিজুর রহমানের নাসাউ কাউন্টিতেও প্রোটিয়া ব্যাটারদের ফেলতে পারেন ধন্দে। সেখানকার উইকেটের গতির হেরফের যে তাঁর বোলিংয়ের পক্ষেও আদর্শ। তাই নাসাউ কাউন্টির অজানা এবং অচেনা উইকেটে ইতিবাচক কিছু করার সম্ভাবনা কম জিইয়ে নেই বাংলাদেশের জন্যও।
সেই সঙ্গে রোহিত শর্মার পরামর্শ তো শুনেছেনই। এই মাঠে চার-ছক্কা মারার প্রতিযোগিতার চেয়ে অন্য পথ ধরার কথাই বলেছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার মারকুটে ব্যাটাররা উড়িয়ে মারার ভাবনায় আস্থা রাখলে সুযোগ তৈরি হবে বাংলাদেশেরও। সেই সুযোগ নিয়ে আজই কি সুপার এইট পর্বে যাওয়া অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলতে পারবেন নাজমুলরা? টানা দ্বিতীয় জয় পেলে সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডিনসে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ দুটি ম্যাচ বেশ স্বস্তি নিয়েই খেলতে পারেন তাঁরা। উইকেট নিয়ে যখন অন্ধকারে প্রায় সব দলই, তখন নির্দিষ্ট দিনে বাজিমাত করে এগিয়ে যাওয়ার বাড়তি সম্ভাবনা তো থাকবেই!