টানা বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী নিম্নাঞ্চলে হঠাৎ করে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে আখাউড়া দক্ষিণ, মোগড়া ও মনিয়ন্দ ইউনিয়নের অন্তত ১৯টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাতের আঁধারে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়ি ছেড়েছেন অনেক মানুষ। সোমবার (২ জুন) সকাল ৯টার পর ফের শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ত্রিপুরার পাহাড়ি ঢলের পানি বঙ্গেরচর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর সংলগ্ন এলাকায় ঢুকে পড়ছে। পাশের খালগুলোও উপচে পড়ায় আশপাশের বাড়িঘর ও দোকানে পানি ঢুকে গেছে, ফলে সেখানকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়িক কার্যক্রমেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্লাবনের ফলে অন্তত ৪৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিএম রাশেদুল ইসলাম জানান, জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং কিছু পরিবারকে এরই মধ্যে সেখানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান জানান, ত্রিপুরার হাওরা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে।
স্থানীয়রা জানান, এ বন্যা এতটাই হঠাৎ করে হয়েছে যে অধিকাংশ পরিবার প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে। অনেকের ঘরবাড়ি ও গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে আখাউড়া স্থলবন্দরের কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিনটি ট্রাকে ১৫ মেট্রিক টন মাছ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে এবং ৪০-৪৬ জন যাত্রী ভারত গেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মে সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাত ও ঢলে মোগড়া, মনিয়ন্দ ও দক্ষিণ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। রোববার পর্যন্ত ১০টি গ্রাম পানির নিচে ছিল, তবে আজ প্লাবনের মাত্রা আরও বেড়েছে।