ঢাকা | |

নগর ভবনে তালা: মেয়র পদে ইশরাককে না বসানোয় অচলাবস্থা, সেবা বন্ধ

বর্তমান মেয়রকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কেন্দ্রীয় ভবন নগর ভবনের সব প্রবেশপথে তালা
  • আপলোড সময় : ১৭ মে ২০২৫, বিকাল ৬:২ সময়
  • আপডেট সময় : ১৭ মে ২০২৫, বিকাল ৬:২ সময়
নগর ভবনে তালা: মেয়র পদে ইশরাককে না বসানোয় অচলাবস্থা, সেবা বন্ধ
বর্তমান মেয়রকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কেন্দ্রীয় ভবন নগর ভবনের সব প্রবেশপথে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের অনুরাগীরা। ফলে নগর ভবনের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার সকাল ৯টার দিকে নগর ভবনে প্রবেশের সব ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।

ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বহাল না রাখার প্রতিবাদে ‘নগরবাসী’ ব্যানারে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তাঁর সমর্থক ও অনুসারীরা এই পদক্ষেপ নেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে কয়েকজন জানান, তাঁরা নগর ভবনে মোট ৬৫টি তালা লাগিয়েছেন। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ইশরাক হোসেনের অনুসারীরা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও তাঁর সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাঁদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানে প্রতিরোধ করার হুমকি দেন।

কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কার্যত অঘোষিত ছুটি কাটাচ্ছেন। তাঁদের কেউই নগর ভবনে ঢুকতে পারছেন না। নগর ভবনে স্থানীয় সরকার বিভাগেরও কার্যালয় রয়েছে। এখানেই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া অফিস করেন। তালা লাগিয়ে দেওয়ার কারণে এই অফিসেরও কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।

তবে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, কর্মসূচি পালনের দ্বিতীয় দিনে গত বৃহস্পতিবারও নগর ভবনের সব ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন থেকেই কার্যত নগর ভবন থেকে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, আজ সকাল নয়টার দিকে নগর ভবনের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। তাঁরা বেলা ১১টা পর্যন্ত নগর ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যান তাঁরা।

সচিবালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গেলেও চারদিকে পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে ইশরাকের সমর্থকেরা সচিবালয়ের সামনে যেতে পারেননি। বেলা দেড়টার দিকে নগর ভবনের সামনে আগামীকালের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মশিউর রহমান জানান, আগামীকাল রোববারও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে ‘নগরবাসী’।

আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ১৮ দিন পর গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ২০২০ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের দায়েরকৃত নির্বাচনী মামলার রায় ও নির্বাচন কমিশনের আপিল দায়ের না করা বিষয়ে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি না, সে বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত ‘মতামত প্রদানসংক্রান্ত’ শিরোনামে চিঠিটি গত বৃহস্পতিবার আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নগরের বাসিন্দারা। সেদিন নগর ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি চলে। সেই কর্মসূচিতে নগরবাসীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজও তাঁরা এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ ও মিছিলে অংশ নেন। নগর ভবনের সামনে অবস্থানকারী বিক্ষোভকারীরা জানান, এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

শুধু নগর ভবন নয়, সংস্থাটির ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়েও সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। একটি অঞ্চলের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইশরাকের সমর্থকেরা আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা সেখানে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রবেশ করতে দেননি।

বেলা দুইটার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সামনে মেয়ে ও ভাইকে নিয়ে জুরাইন এলাকা থেকে বাবার মৃত্যুসনদ নিতে এসেছিলেন নাসরিন বেগম। নগর ভবনে তালা লাগিয়ে দেওয়ার কারণে তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এর আগে গত বৃহস্পতিবারও তিনি বাবার মৃত্যুসনদ নিতে এসেছিলেন। আন্দোলনের কারণে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। আজ এসে দেখছেন সব ফটকে তালা ঝুলছে। এখন তিনি কী করবেন বুঝতে পারছেন না।’

একই সময়ে মোটরসাইকেলে করে গুলশান এলাকা থেকে এক আত্মীয়র জন্মনিবন্ধনের তথ্য জানতে নগর ভবনে এসেছিলেন শাওন আহমেদ। মূল ফটক তালাবদ্ধ থাকায় তিনি ভেতরে ঢুকতে পারেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দাবির শহর ঢাকায় তাঁদের মতো সাধারণ মানুষেরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব ভোগান্তির দ্রুত অবসান চান তাঁরা।

  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: স্টাফ রির্পোটার।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স
মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে বন্দি, নারী-শিশুসহ উদ্ধার ২৫

মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে বন্দি, নারী-শিশুসহ উদ্ধার ২৫