আইনের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া কোনো দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র কিংবা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার সাংবাদিকতার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হলেও অতীতে ফ্যাসিস্ট সরকারগুলো সংবাদমাধ্যমকে দমন করেছিল। তারা সংবাদ সম্মেলনকে শুধুমাত্র প্রশংসা আর স্তুতির মাধ্যমে জনগণকে অপমানের হাতিয়ার বানিয়েছিল।

শুক্রবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও জানান, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলার বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার—এ ধরনের মামলার বাদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কেবল তখনই নেওয়া হবে, যখন আদালতে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হবে। তিনি বলেন, "আমরা দায়িত্বে থাকলে ব্যবস্থা নেব, আর না থাকলে যারা দায়িত্বে আসবেন, তাদের কাছেও আমরা এই প্রত্যাশা রাখি।"

আসিফ নজরুল বলেন, সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশকে তদন্ত ছাড়া কাউকে না ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে এনে নিরপেক্ষতা হারানোর পথে ঠেলে দিয়েছিল। অথচ ৯০-এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এসব সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এখন তাদের সেই নিরপেক্ষ ভূমিকায় ফিরতে দিতে হবে।

নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পরিবেশ আমরা চাই, এবং এই পরিবেশ ভবিষ্যতেও যেন বজায় থাকে—এমন নিশ্চয়তা চাই। তিনি বলেন, ছাপা সংবাদপত্র এখন এক ধরনের সংকটে রয়েছে; এর সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন আয় কমছে। করোনা মহামারির সময় অন্যান্য খাতগুলো প্রণোদনা পেলেও সংবাদপত্র শিল্প তেমন কিছুই পায়নি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—নোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি আবদুল হাকিম, নোয়াব সহ-সভাপতি এ এস এম শহীদুল্লাহ খান বাদল।

উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ও মাহবুবা চৌধুরী, ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী।

এছাড়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ বিশিষ্টজনেরা, তাদের মধ্যে ছিলেন: ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মাহবুবুর রহমান, মেঘনা গ্রুপ চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান, সায়হাম গ্রুপের এমডি সৈয়দ শাফকাত আহমেদ, পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, অর্থনীতিবিদ মাসরুর রিয়াজ, চেম্বার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রীতি চক্রবর্তী, ওরিয়ান গ্রুপের এমডি সালমান করিম, বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি এবং এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু।