ভারত সরকার পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) জন্য ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে রয়েছে। একইসঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে স্থাপন করা হবে দুটি ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ বা ফিল্ড কমান্ড ঘাঁটি।
সোমবার (৫ মে) সরকারি সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি নতুন ব্যাটালিয়নে এক হাজারেরও বেশি সদস্য থাকবে। এই ইউনিটগুলোতে মোট প্রায় ১৭ হাজার নতুন সেনা যুক্ত হবেন। বর্তমানে বিএসএফের ব্যাটালিয়নের সংখ্যা ১৯৩। নতুন ইউনিট যুক্ত হলে সদস্যসংখ্যা আরও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
সূত্র জানায়, এই পরিকল্পনাটি নীতিগত অনুমোদন পেয়ে গেছে এবং এখন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কিছু চূড়ান্ত প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলেই আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে এই ইউনিটগুলো গঠন করা হবে।
সীমান্তে বাড়ছে কৌশলগত প্রস্তুতি
দুটি নতুন ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টারের মধ্যে একটি স্থাপন করা হবে জম্মুতে। এটি মূলত ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের জম্মু ও পাঞ্জাব অংশে নিরাপত্তা জোরদারে ভূমিকা রাখবে। অন্য হেডকোয়ার্টারটি স্থাপন করা হবে মিজোরামে, যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করবে।
এই হেডকোয়ার্টারগুলো সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বিএসএফের কৌশলগত কর্মকৌশল, কমান্ড সমন্বয় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা এবং কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় পাকিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সরকার বিএসএফের সক্ষমতা বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বর্তমান কাঠামো ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে বিএসএফ পূর্ব ফ্রন্টিয়ারে মিজোরাম-কাছার হেডকোয়ার্টারের অধীনে আসাম, শিলচর, আইজল ও মণিপুরে তিনটি সেক্টরের তদারকি করছে। পশ্চিম সীমান্তে জম্মু অঞ্চলে রয়েছে রাজৌরি, সুন্দরবনি, জম্মু ও ইন্দ্রেশ্বর নগরে চারটি সেক্টর, যেগুলোর দায়িত্বে রয়েছেন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা।
নতুন হেডকোয়ার্টার স্থাপন হলে এই সেক্টরগুলোর মধ্যে কার্যক্রম আরও সমন্বিত ও গতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিএসএফ ইতোমধ্যে পুরুষ ও নারী সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিয়োগের পর প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন ইউনিটগুলোর কার্যক্রম শুরু করা হবে।
বিএসএফের বর্তমান সক্ষমতা
বর্তমানে বিএসএফ একটি ২ লাখ ৭০ হাজার সদস্যের শক্তিশালী বাহিনী, যারা মোট ৬ হাজার ৭২৬ কিলোমিটার সীমান্ত রক্ষা করে। এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ২ হাজার ২৯০ কিলোমিটার এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। এখনও প্রায় ১ হাজার ৪৭ কিলোমিটার সীমান্ত সুরক্ষাবেষ্টনীবিহীন অবস্থায় রয়েছে, যার বড় অংশ নদীবাহিত ও দুর্গম বনাঞ্চল দিয়ে গিয়েছে।
বিএসএফ বর্তমানে ১ হাজার ৭৬০টি সীমান্ত চৌকি পরিচালনা করছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর ভূপ্রকৃতিগত জটিলতা বিবেচনায় বিএসএফের নতুন ইউনিট ও হেডকোয়ার্টার গঠনের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী এবং কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।