ঢাকা | |
সংবাদ শিরোনাম :

১৭’শ টাকা বেতনের নৈশ প্রহরী, কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি

জাহাঙ্গীর আলম পেশায় মাদারগঞ্জ সাব রেজেষ্ট্রি অফিসের নৈশ প্রহরী মাস্টার রোলে চাকরী করে বেতন ১৭’শ টাকা, অথচ কোটি
  • আপলোড সময় : ১০ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৫:২৪ সময়
  • আপডেট সময় : ১০ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৫:২৪ সময়
১৭’শ টাকা বেতনের নৈশ প্রহরী, কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি ছবি : সংগৃহীত
জাহাঙ্গীর আলম পেশায় মাদারগঞ্জ সাব রেজেষ্ট্রি অফিসের নৈশ প্রহরী মাস্টার রোলে চাকরী করে বেতন ১৭’শ টাকা, অথচ কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক।

মাদারগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকার জমিতে কয়েক কোটি টাকায় তৈরী করেছেন রাজ প্রাসাদ গরুর খামার, আবাদী জমি, নিজের থাকার রাজকীয় বাড়ি, একধিক বাসা বাড়ি, আবাদী জমি, পুকুর কোন কিছুর অভাব নেই অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

সরকারি খাস জমি দখল করে গরুর খামারসহ একধিক পাকা বাড়ি করেছেন। সব কিছু হয়েছে মাদারগঞ্জ সাব রেজেষ্ট্রি অফিসের বদৌলতে।

কয়েক বছর আগে দিন মজুর কামলা খেটেছেন এই জাহাঙ্গীর, বছরবান্দা কামলার কাজও করেছেন বহুদিন। এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।

১২ বছর আগে সাব রেজেষ্ট্রি অফিসের অফিসারের খাবার রান্নার কাজ করতে গিয়ে সে মাস্টাররোলে চাকরী পেয়ে যান। এখানেই তার ভাগ্য খুলে যায়। রাতারাতি সে অফিসের গোপন কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। রাতের অফিসে গোপন কাজগুলো তার হুকুমে চলে।

যতো অনৈতিক অবৈধ কাজ হয় সবটার ভাগ যায় তার হাতে। জমি রেজেষ্ট্রির, দলিল রেজেষ্ট্রির কমিশন, নকল উত্তোলনসহ সব অবৈধ কাজের তার হাত ছাড়া হয় না। এক কথা তিনি ২য় সাব রেজিষ্টার বলে অফিসের লোকজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দলিল লেখক ও অফিসের কর্মচারী জানান, এ অফিসে জাহাঙ্গীরের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তার সুপারিশে আরো কয়েকজন হোমড়া চোমড়া ছেলেদের নকল নবিশের চাকরী দিয়ে তার হাত শক্তিশালী করেছেন।

কেও প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি দিয়ে, এমনকি মারপিটের ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। তার সিন্ডিকেটের কয়েকজনের কাছে পুরো সবরেজেষ্ট্রি কার্যালয় জিম্মি হয়ে আছে।

এলাকা বাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি উপজেলার সুখনগরী গ্রামে, নদী ভাঙ্গনের পর সে উপজেলা সদরে পাল পাড়ায় আশ্রয় নেয়। এক সময় দিনমজুরী কামলা খাটতো, পরে কয়েজনের বাড়িতে বছর বান্দা কামলা হিসেবে কাজ শুরু করে।

এক সময় কাজ রেখে উপজেলার বিভিন্ন অফিসে ছোট খাট হাত ফরমায়েসী কাজ করে। পরে তার স্থিতি হয় উপজেলা সাব রেজেষ্ট্রি অফিসে। সেখানে বেচালার অফিসারদের রান্নাবান্না ও ঘর মুছার কাজ করে।

কাজ শুরু করার পর তৎকালিন এক সাব রেজিষ্টির তাকে অফিসের ছোট খাটো কাজ কারানো শুরু করে। এক সময় সে মাস্টার রোলে ঐ অফিসের নৈশপ্রহরীর কাজ পায় ৩শ টাকার বেতনে। বর্তমানে তার বেতন ১৭’শ টাকা।

বেতনকে তোয়াক্কা না করে নেমে পড়ে অবৈধ কাজে। এক এক করে সব কাজ সে হাতিয়ে নেয়। দিন কে রাত রাত কে দিন বানিয়ে ফেলে। এক এক করে সম্পদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। গরুর খামার, জমি, বাসা বাড়ি, কৃষি জমি, পুকুর, প্রজেক্ট, এবং নিজ ও আত্মীয় স্বজন ছাড়াও নানান নামে সম্পদ গড়েছেন তিনি। সুখনগরীতে সরকারী খাস জমি দখল করে এখানে খামার গড়ে তুলেছেন, কয়েক বছর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আবু তালুকদারের কাছ থেকে উপজেলা কমপ্লেক্স এর কাছে কোটি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন। এখানেও তার জমির দাম কম ও ভুয়া শ্রেণি বসিয়ে কম মূল্যে জমি রেজেষ্ট্রি করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এই দলিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এই জমিতে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি প্রাসাদ তৈরী করছে। তার কাজ এখনো শেষ হয়নি। দুতলা পর্যন্ত করেছেন। এছাড়া পালপাড়ায় একটি দুতলা সুরম্য একটি বাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে একাধিক ঘর, বাগান , গরুর খামার, পুকুর, একর একর আবাদী জমি। এসব দেখে গ্রামবাসী হতবাক।

উপজেলা কমপ্লেক্স্র এলাকায় তার প্রাসাদের খোঁজ নিতে গেলে ভয়ে কেও মুখ খুলে না, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাক্তি জানান, তার অফিসের একদল সন্ত্রাসী কেও কথা বললেই হুমকি দেয়।

তারা জানান, এই জাহাঙ্গীরের হাতে আলাদিনের চেরাগ আছে, রাতা রাতি তাকে কোটিপতি বানিয়েছে। সাব রেজেষ্ট্রি অফিস তার কথায় চলে। সুখনগরী গ্রামে খোঁজ নিলে একাধিক গ্রামবাসী জানান, সে অল্প দিনে এতো টাকার মালিক হয়েছে। তার অবৈধ টাকায় এসব কেনা।

এ বিষেয়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি। তিনি বার বার তার বিরুদ্ধে খবর না দিতে অনুরোধ করেন।

মাদারগঞ্জ উপজেলায় স্থায়ী সাব রেজিষ্টার না থাকায় বর্তমান সাব রেজিষ্টার কথা বলতে রাজি হয়নি। জেলা রেজিষ্টার মোঃ শাহাজাহান জানান, এটা মাদাগঞ্জ সাব রেজেষ্ট্রি অফিসের আওতায় তাদের সাথে কথা বলুন।
  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ডেস্ক।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
যেভাবে ৭৮১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েন নাসা নজরুল

যেভাবে ৭৮১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েন নাসা নজরুল