ঢাকা | |

রোপা-আমন ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত বরেন্দ্রের কৃষক

বরেন্দ্র খ্যাত অঞ্চল রাজশাহীতে শেষ আষাঢ়ের বৃষ্টির পানিতে কৃষকের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মাঠজুড়ে আমনের ক্ষেতে রাসয়নিক সার,
  • আপলোড সময় : ২০ আগস্ট ২০২৩, সকাল ৯:৩৩ সময়
  • আপডেট সময় : ২০ আগস্ট ২০২৩, সকাল ৯:৩৩ সময়
রোপা-আমন ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত বরেন্দ্রের কৃষক ছবি : সংগৃহীত
বরেন্দ্র খ্যাত অঞ্চল রাজশাহীতে শেষ আষাঢ়ের বৃষ্টির পানিতে কৃষকের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মাঠজুড়ে আমনের ক্ষেতে রাসয়নিক সার, কীটনাশক ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। যেদিকে তাকাই চোখ যায় যতদূর শুধু সবুজের সমারোহ আর সবুজের সমারোহ। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠতে শুরু করেছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল আমন ধান। অন্যবছরের তুলনায় এ বছর আমন রোপণের শুরু থেকে কৃষককে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

আমন চাষের ভরা মৌসুম আষাঢ় মাসেও ছিলনা আকাশে বৃষ্টির দেখা। যার ফলে সঠিক সময়ে আমন ধান রোপণ করতে পারেনি প্রায় কৃষক। তবে অসময়ে হলেও বাদ পড়েনি আমন ধান চাষ করতে কোনো কৃষক। আমনের শুরুতে ডিপ মোটরের পানি কিনে আমন ধান রোপণ করছেন তাদের প্রায় জমিতে ধানের শীষ গজাতে শুরু করেছে।

রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন আমনের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কম-বেশি সব কৃষকের কষ্টে অর্জিত আমন ধানের সবুজ পাতার রঙে ছেয়ে গেছে মাঠ। বোরো কর্তন শেষে রোপা-আমন চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নামেন কৃষক ও শ্রমিকরা। কেউ ধান গাছের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। সবুজ পাতায় বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। রোপা-আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক। বাড়ির আশপাশে বিস্তীর্ণ রোপা-আমন ফসলের মাঠ, সবুজে সমারোহ। কেউ ধান গাছের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। সবুজ পাতায় বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।

কৃষি অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছর রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় ৪ লাখ ৫ হাজার ৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ধান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৫৮৮ টন। বৃষ্টিনির্ভর আমন চাষ পুরোটাই সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে ব্যয় বাড়ছে কৃষকের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯ লাখ ৪৭ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমির প্রায় ৩৩ শতাংশ বরেন্দ্র অঞ্চল। এ অঞ্চলের ৫৩ শতাংশ এলাকা উচ্চ বরেন্দ্র ও ৪৭ শতাংশ সমতলভূমি। বরেন্দ্র অঞ্চলে ৩৫ হাজার ৫৭০ হেক্টর কৃষিজমি শুধু বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল।

কৃষকরা বলছেন, কৃষিনির্ভর রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষের ফসল উৎপাদন ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে। এবার বড় ধরনের দুর্যোগ না হলে আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে আমরা অনেক উপকৃত হব এবং বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব বলে মনে করছি।
তানোর উপজেলার প্রকাশনগর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি ২৫ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এতে করে তার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৭হাজার টাকা করে। তিনি বলেন, ধান উঠা পর্যন্ত বিঘা প্রতি আরো খরচ হবে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা মতো। এতে করে একেক বিঘা আমন ধান কাটা পর্যন্ত মোট খরচ হবে ১০ থেকে ১২ হাজার করে টাকা।

গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের কৃষক বাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, অন্যবছরের তুলনায় এবছর আমন চাষের জন্য কৃষককে ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। একেতো আমন রোপণের সঠিক সময়ে বৃষ্টি ছিলনা তার ভিতরে সার পটাশের ব্যাপক সংকট। ফলে সার পটাশের দাও বেড়েছে তিনগুণ। যেখানে বিঘা প্রতি কৃষকরা সার পটাশ দিত ২০কেজি করে। সেখানে সার পটাশের দাম বৃদ্ধির জন্য কৃষকরা সার পটাশ দিচ্ছেন অর্ধেক করে। তার পরেও আল্লাহর রহমতে খুব ভালো হয়েছে কৃষকের আমন ধান চাষ।

মোহনপুর উপজেলার রায়ঘাটি ইউনিয়েনের কৃষক আজম প্রামানিক। তিনি বলেন, এবার আমার মনে হচ্ছে বন্যার আশংক্ষা নেই তাই অন্যান্য বারের তুলনায় এবার আমরা অধিকহারে আমন ধান চাষ করেছি। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কৃষি অফিসের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ ও আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত আছি। আশা করছি, এবার আমন ধানে বাম্পার ফলন হবে।

অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, যথা সময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে এবার আমন চাষের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা আমন ধান রোপণ শেষে আবার পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন কৃষকরা। আমনের এই একটি আবাদ কৃষকরা অল্প খরচে বেশি লাভবান হয়ে থাকেন। যদি কোন দূর্যোগ বালাই না হয় তাহলে আমনের ফলনও খুব ভালো হয়। আর কৃষকের আমন ধান চাষে কোন রোগ বালাই না হয় সেজন্য প্রতিনিয়ত কৃষি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে থেকে তদারকি করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে কৃষকরা এবার ভালো আমন ধানের ফলন পাবেন। কোন ধরনের দুর্যোগ দেখা না দিলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: স্টাফ রির্পোটার।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স
পাকিস্তানে রেলস্টেশনে বোমা হামলা, নিহত ২৪

পাকিস্তানে রেলস্টেশনে বোমা হামলা, নিহত ২৪