ফেসবুকে প্রবেশ করলে হয়তো আপনার চোখের সামনে একটা মিম চলে আসতে পারে, যেখানে বলা থাকবে, পানির দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। ধন্দে পড়ে যেতে পারেন যে
কমপক্ষে ১৫ টাকায় একটা ডিম কিনতে হলে, সেটা কী করে পানির দামে হয়! হয় বৈকি। একটা ছোট পানির বোতলের দাম ১৫ টাকা। তাই একটা পানির বোতলের দামের সমান একটা ডিমের দাম।
রসিকতা এক পাশে রেখে বাজারে ডিমের সার্বিক পরিস্থিতিটা একটু বুঝে নেওয়া যাক। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, সম্প্রতি ডিমের দাম বাড়িয়ে ১০ দিনে ১২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা পকেটে ভরেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভার আলোচকদের এমনটাই দাবি।
ডিম উৎপাদনকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫০ পয়সা। আর পোলট্রিমালিকেরা জানিয়েছেন, এই খরচ ১০ টাকা ৭৯ পয়সা। এর সঙ্গে যদি যৌক্তিক মুনাফা যোগ করা হয়, তবে ডিমের খুচরা মূল্য হওয়ার কথা ১২ টাকা, এর বেশি নয়। অথচ বাজারে একটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকায়। এভাবেই কয়েক দিনে অসাধু ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
কীভাবে বাড়িয়েছে তারা ডিমের দাম? কারণ খুঁজেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। তারা জানিয়েছে, বেশির ভাগ আড়তে ডিম বিক্রির কোনো রসিদ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। তাই কারা কত টাকার ডিম বিক্রি করেছে সে রকম কোনো তথ্য না থাকায় ইচ্ছেমতো মুনাফা করে নিয়েছে তারা। যদিও ভোক্তা অধিদপ্তর নির্দেশ দিয়েছে, আজ বুধবার থেকে পাকা রসিদ ছাড়া কোনো পর্যায়ে ডিম বিক্রি করা যাবে না, কিন্তু এ কথা অসাধুরা শুনবেন তো? না শুনলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এ কথাও জানানো হয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে।
ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তত একটা ডিম থাকবে, এই আশা অনেকেই করেন; বিশেষ করে, মাংসের বদলে ডিম দিয়ে যাঁরা প্রোটিনের চাহিদা মেটান। অনেকের কাছে মাংসের দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই। তাই তাঁরা ডিমটাকে হাতের নাগালের কাছে পান। কিন্তু সেই ডিমও যদি নাগালের বাইরে চলে যায়, তাহলে এই অভাব পূরণ করা কঠিন হবে। ডিম বিক্রি করে লাভ হবে শুধু ব্যবসায়ীদেরই। ডিম না খেয়ে বিপাকে পড়বেন ভোক্তারা। অসাধু ব্যবসায়ীরা ধনী হতেই থাকবেন আর সামর্থ্যহীন ভোক্তারা জীর্ণ হতে থাকবেন।
এভাবে যে সেসব মানুষের স্বাস্থ্যের রফাদফা হয়ে যাবে, সেই কথা নিশ্চয়ই ভোক্তা অধিদপ্তর ভেবেছে। তবে এই ভাবনা যেন কঠিন হয়। সেই সঙ্গে এর বাস্তবায়নও। নয়তো আইনের ফোকর গলে অসাধুরা ঠিকই বেরিয়ে পড়বে। তাতে ডিমে কার লাভ আর কার ক্ষতি হবে, সে কথা ব্যাখ্যা না করলেও চলবে।