ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর থাকার পরও প্রতিদিনই নতুন হামলার শিকার হচ্ছেন নিরীহ ফিলিস্তিনিরা। শনিবার (৮ মার্চ) ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও সাতজন আহত হয়েছেন। একই দিনে গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যা ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে।
চিকিৎসা ও স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এবং এএফপি জানায়, শনিবার দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পূর্বে আবু হালাওয়েহ এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া গাজা-মিসর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোরে ইসরায়েলি সামরিক যানবাহন থেকে গুলি ছোড়া হয়, যা রাফাহ ও তার আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। গাজার উত্তরাঞ্চলেও বেইত হানুন শহরে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করার সময় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় সাতজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব রাফাহতে আল-সালাম পাড়ায় ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে শব্দ বোমা নিক্ষেপ করা হয় এবং গাজার পূর্ব সীমান্তেও তীব্র গুলিবর্ষণ চালানো হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসা সূত্র জানায়, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার ফলে হাসপাতালে প্রতিনিয়ত আহতদের ভিড় বাড়ছে, চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট তীব্র হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যা গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৪৫৩-তে পৌঁছানোর প্রমাণ দেয়। এছাড়া আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ জনে দাঁড়িয়েছে, যা মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ভূখণ্ডটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পরও ইসরায়েল তার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
যদিও গত ১৯ জানুয়ারি থেকে তিন-পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, যার মধ্যে বন্দি বিনিময়, স্থায়ী শান্তি ও ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা থেকে প্রত্যাহারের শর্ত ছিল, তবুও এই হামলা বন্ধ হয়নি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে, তবে ইসরায়েল সেই আহ্বান উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজায় প্রতিদিন বাড়তে থাকা নিহতের সংখ্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ বিশ্ববাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করা এবং ইসরায়েলকে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনা। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি