অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেডের তাণ্ডবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। শনিবার (৮ মার্চ) ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার পরপরই দেশটির কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়। ঝড়ের ফলে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৩৬ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড়টি প্রথমে অতিক্রান্তীয় ঝড় হিসেবে আঘাত হানে, পরে তা গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপে পরিণত হয়। এর শক্তিশালী বাতাস বহু গাছপালা উপড়ে ফেলেছে, বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে গেছে, এবং ভবন ও সড়ক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব কুইন্সল্যান্ড ও উত্তর-পূর্ব নিউ সাউথ ওয়েলসের ৪০০ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, কুইন্সল্যান্ডে দুই লাখ ৯৫ হাজার এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের ৪২ হাজার ৬০০ বাড়িঘর বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে, যা প্রায় সাত লাখ ৫০ হাজার মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে স্থবির করে দিয়েছে। কুইন্সল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্রিসাফুলি এক বিবৃতিতে বলেন, "এটি রাজ্যের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট, যা জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।"
সরকারি আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনেও ভারি বৃষ্টিপাত ও প্রবল ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীগুলোতে পানির স্তর দ্রুত বাড়ছে, ফলে ছোট থেকে বড় আকারের বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। ইউটিলিটি কোম্পানিগুলো সতর্ক করেছে যে, বন্যার কারণে বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারের কাজও ব্যাহত হতে পারে।
দেশটির আবহাওয়া ব্যুরো সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যেতে হবে এবং জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। ইতোমধ্যেই জরুরি উদ্ধারকারী দলগুলো মোতায়েন করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেডের এই তাণ্ডব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও কার্যকর প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। অস্ট্রেলিয়ার জনগণ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তবে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তথ্যসূত্র : এএফপি