ঢাকা | |

মডেল মসজিদ দুর্নীতিতে পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি করা হয়েছে

সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে কমপক্ষে ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য পেয়েছে অন্তর্বর্তী
  • আপলোড সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দুপুর ১০:৩৫ সময়
  • আপডেট সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দুপুর ১০:৩৫ সময়
মডেল মসজিদ দুর্নীতিতে পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি করা হয়েছে
সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে কমপক্ষে ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মসজিদের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ, অবকাঠামো নির্মাণ ও অন্যান্য কেনাকাটায় এসব দুর্নীতি হয়েছে।

মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতা এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এ বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করেছেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতিটি মসজিদের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে গড়ে ১৭ কোটি টাকা। তবে এলাকাভেদে ১৫ কোটি টাকা থেকে শুরু করে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে। এসব মসজিদ নির্মাণে প্রকৃত ব্যয় অর্ধেকেরও কম। বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। 

তদন্তের বিষয়ে কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, আমাদের তদন্ত ও অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বড় এ প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সৌদি আরব। ঢাকায় অবস্থিত সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য পেয়ে দেশটি এ প্রকল্পে সহায়তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, প্রকল্পে এখন পর্যন্ত যতটুকু অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য পেয়েছি, সেটাকে এককথায় পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি বলতে হবে। সরকারের রাজস্ব খাতের বিপুল পরিমাণ টাকা মসজিদ প্রকল্পের নামে এভাবে লুট করা হবে, সেটা অভাবনীয় ও অকল্পনীয়।

৮৪২ কোটি টাকার প্রকল্প সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকায় শেষ।২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে মডেল মসজিদ নির্মাণের ফর্মুলা পেশ করে। নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার প্রথমে ৮৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। এ অর্থ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেবে বলে জানানো হয়।

পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালে এক লাফে এ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা করা হয়। এর কিছুদিন পর দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত প্রকল্প হিসেবে অর্থ বরাদ্দ আরো বাড়িয়ে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। বিপুল পরিমাণ এ রাষ্ট্রের তহবিল থেকে দেওয়া হয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ প্রকল্পের অধীনে মসজিদ নির্মাণ হবে ৫৬৪টি। এ জন্য সরকারের কোষাগার থেকে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার ৩০০ মসজিদ উদ্বোধন করে গেছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ৫০টি। নির্মাণ কাজ চলছে আরো ১৮০টি মডেল মসজিদের। অবশিষ্ট ৩৪টি মসজিদের জন্য জায়গা নির্বাচন করা হলেও বর্তমান প্রশাসনের আপত্তিতে সব স্থগিত হয়ে গেছে। এখন নতুন করে জায়গা নির্বাচনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরকালে দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য প্রস্তাব করেন। সৌদি সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মতি দেওয়ার পর এ মডেল মসজিদ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা। যার মধ্যে সৌদি সরকারের অনুদান হিসেবে দেবার কথা ছিল ৮ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করবে বলে জানানো হয়।

সরকার এ বিষয়ে একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করে সৌদি সরকারকে প্রেরণ করে। যাতে প্রতিটি মসজিদের জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে গড়ে ১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি নিয়ে সৌদি সরকারের সন্দেহ হলে তারা নিজস্ব পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনুসন্ধানের জন্য ঢাকার একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিটি মসজিদের জন্য ৮ থেকে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়।

মডেল মসজিদ প্রকল্পে প্রাথমিক অনুসন্ধানে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের তথ্য পেয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় দুটি পৃথকভাবে এ প্রকল্পের যাবতীয় বিষয় তদন্ত করছে।

সূত্র: আমার দেশ

  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: স্টাফ রির্পোটার।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স
হামাসের বিরুদ্ধে হঠাৎ গাজাবাসীর নজিরবিহীন বিক্ষোভ

হামাসের বিরুদ্ধে হঠাৎ গাজাবাসীর নজিরবিহীন বিক্ষোভ