ডেসটিনির প্রায় ৪৫ লাখ গ্রাহক ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হারিয়ে পথে বসেছিলেন। তাদের অধিকাংশই তরুণ শিক্ষার্থী। তাদের বিনিয়োগের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ সারাদেশে ছড়িয়ে আছে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ সম্পদের দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছিল। তবে ডেসটিনির সম্পদের বড় অংশ বেদখল। গত এক যুগ প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতাসীনরা এসব সম্পদের বড় অংশ ভোগ করেছেন। এখন পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী পক্ষ এসব সম্পদ কব্জায় নিয়েছে। পার্বত্য এলাকার ৩ হাজার ৭২৪ একর জমিতে গ্রাহক বিনিয়োগের ‘১২ হাজার কোটি টাকা’র গাছও হাওয়া। ডেসটিনির ৪৫ লাখ গ্রাহকের পাওনা ফেরত পাওয়া নিয়ে রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।
ডেসটিনির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, কোথায় কী অবস্থায় তাদের সম্পদ রয়েছে সে বিষয়ে তারা অনুসন্ধান করছেন। চলতি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কোম্পানির কমিটি করে ডিস্ট্রিবিউটরদের হাতে মালিকানা নিয়ে আসা হবে। ডেসটিনির সম্পদের ৭৫ শতাংশের মালিক এই মাল্টিপারপাসের সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী। বাকি ২৫ শতাংশের মালিক ৪৯ জন শেয়ার হোল্ডার। এপ্রিল ও মে মাসে ব্যবসার পলিসি নিয়ে কাজ করা হবে। ডেসটিনিকে এমএলএম ব্যবসা করতে দিলে তারা সেই ব্যবসায় ফিরে যাবেন। তা না হলে ডেসটিনি ট্র্যাডিশনাল ব্যবসা শুরু করবে।
ডেসটিনির কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, আদালতের আদেশে ডেসনিটির সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছিল পুলিশ। পুলিশের কব্জায় থাকা এসব সম্পদের একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। জমি ও বাড়ির একটি অংশ গত এক যুগ আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের দখলে ছিল। ক্ষমতার পটপরিবর্তনে সেই সম্পদ বর্তমানে অন্য গ্রুপ ভোগ করছে। সম্পদ লুটপাট ও ভাগাভাগিতে সহযোগিতা করেছেন ডেসটিনির এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা।
ডেসটিনি-২০০০-এর তথ্যেও গ্রাহকের অর্থের ভাগাভাগি ও লুটপাটের চিত্র ফুটে উঠেছে। আমাদের সময়ের হাতে আসা তথ্যে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের সদর থানায় ডেসটিনি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টার ও মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য ৮১ শতাংশ জমি কেনা হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে জমি সিএমপি কমিশনারের তত্ত্বাবধানে থাকার কথা। তবে গত ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা জমিটি জবর-দখল করে রেখেছিলেন। বর্তমানেও ডেসটিনির দখলে নেই। ঢাকার ৬২নং পুরানা পল্টন এলাকায় ডেসটিনি বিজনেস সেন্টার স্থাপনের জন্য ২৪.২৩ শতাংশ জমি কিনেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে জমিটি তাদের দখলে নেই। ডেসটিনি জানিয়েছে, তাদের সম্পদ বিএনএস গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আছে।
ডেসটিনি-২০০০ জানিয়েছে, গাজীপুর জেলার টঙ্গিতে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের জন্য ৯.৫ একর জমি কেনা হয়েছিল। সেই জমি বিক্রয়কারী নিজের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভোগ-দখল করছেন।
ডেসটিনির তথ্য থেকে আরও জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার কাউয়ারচরে ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যান্টেশনের জন্য ১৪৯ একর জমি কেনা হয়েছিল। সেই জমিতে লাগানো গাছ কেটে বিক্রি করেছে এই প্রতিষ্ঠানেরই পরিচালক কামরুল। একই জেলার কুয়াকাটায় ৫৬ একর জমিও ডেসটিনি-২০০০-এর সম্পদ কমিটির দখলে নেই। একইভাবে খুলনা বিভাগের তেরখাদায় ৪১ একর ও সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকায় ৯৪ একর জমি বিক্রয়কারীই বেআইনিভাবে দখল করেছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান থানায় ডেসটিনির ডায়মন্ড হাউজিং প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ১৫৫ শতাংশ জমি কেনা হয়েছিল। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে ডায়মন্ড সিটি প্রকল্প-১ এর আওতায় ১ হাজার ৪৬ শতাংশ ও প্রকল্প-২ এর আওতায় ১ হাজার ১৯০ শতাংশ জমি কেনা হয়েছিল। ডেসটিনি ডায়মন্ড সিটি প্রকল্পের এসব জমি আগের মালিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্য বলছে, ডেসটিনি গ্রুপের স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৯০ কোটি ৩৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩৩৬ টাকা। তবে গ্রাহকরা ডেসটিনির কাছেই পাবেন অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান সম্পদ গ্রাহকদের দেনার বোঝার চেয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা কম।
জানা গেছে, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (ডিএমসিএসএল) সাতটি কোম্পানির আওতায় ৩৯৪ কোটি ৬৩ লাখ ৩২ হাজার ৮১০ টাকার এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের (ডিটিপিএল) পাঁচটি কোম্পানির আওতায় ১৯৫ কোটি ৭০ লাখ ৫৩ হাজার ৫২৬ টাকার সম্পদ রয়েছে।
বহুধাপ বিপণন (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, এমএলএম করে ভাত খেতে হবে ডেসটিনি সেই বাধ্যবাধকতায় নেই। আমাদের এমএলএম ব্যবসা করতে দিলে ভালো, না দিলে আমরা ট্র্যাডিশনাল ব্যবসা শুরু করব।
সূত্র: আমাদের সময়