যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বুধবার নেটো মিত্রদের বলেন, ইউক্রেন তার ২০১৪-পূর্ববর্তী সীমান্ত ফিরে পাবার যে আশা করছে, তা একটি “অবাস্তব লক্ষ্য।” তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে না যে, নেটোতে কিয়েভের সদস্যপদ লাভ রাশিয়ার সাথে আলোচনার মাধ্যমে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের সমাপ্তির কোন “বাস্তবসম্মত ফলাফল” হতে পারে।
ব্রাসেলস-এ নেটো সদর দফতরে বক্তব্য রাখার সময় হেগসেথ অন্যান্য প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বলেন, “আপনাদের মত আমারাও একটি সার্বভৌম এবং সমৃদ্ধ ইউক্রেন দেখতে চাই। কিন্তু আমাদের শুরু করতে হবে এটা স্বীকার করে যে, ইউক্রেনের ২০১৪-পূর্ববর্তী সীমান্তে ফিরে যাওয়া একটি অবাস্তব লক্ষ্য। এই মরীচিকার পেছনে ছুটলে যুদ্ধ শুধুই দীর্ঘায়িত হবে এবং কষ্ট আরও বাড়বে।”
এখনো কোন শান্তি আলোচনার আয়োজন করা হয় নাই, তবে হেগসেথ বলেন যে, যুদ্ধের টেকসই সমাপ্তি টানতে হলে সেখানে “শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি থাকতে হবে, যা নিশ্চিত করবে যে যুদ্ধ আবার শুরু হবে না।”
“যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে না যে, নেটোতে কিয়েভের সদস্যপদ লাভ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার একটি বাস্তবসম্মত ফলাফল হতে পারে,” তিনি বলেন।
এ’ধরনের ফলাফল সামরিক জোটের পারস্পরিক প্রতিরক্ষার বিধান বাস্তবায়নের প্রয়োজন সৃষ্টি করবে, যার মাধ্যমে নেটোর ৩২টি সদস্য রাষ্ট্রের যে কেউ আক্রান্ত হলে অন্যরা তাদের পক্ষে লড়াই করতে বাধ্য।
নেটো-বহির্ভূত শান্তি মিশন
কিয়েভ অনেক দিন ধরে নেটোর সদস্য হতে চাইছে। জোটের অন্যান্য সদস্যরা বলছে তারা সেটাতে অঙ্গীকারবদ্ধ, কিন্তু যুদ্ধ চলাকালে নয়। তার পরিবর্তে, হেগসেথ বলেন যে, ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি “শক্তিশালী ইউরোপিয়ান এবং ইউরোপিয়ান নয়, এমন সেনাদের মাধ্যমে” নিশ্চিত করা যায়।
তিনি বলেন, “এই সৈন্যদের যদি কোন এক সময়ে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষক হিসেবে মোতায়েন করা হয়, তাহলে তাদের একটি নেটো-বহির্ভূত মিশনের অংশ হিসেবে মোতায়েন করা উচিত, এবং তারা আর্টিকেল-৫ এর আওতায় পড়বে না,”। নেটোর পারস্পরিক প্রতিরক্ষার বিধান আর্টিকল-৫ নামে পরিচিত।
রাশিয়া ২০১৪ সালে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া দখল করে নেয়। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে কিয়েভ বাহিনীর সাথে লড়াই করছে। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ণ অভিযান শুরু করে, এবং তারা বর্তমানে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।
হোয়াইট হাউসে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে, তাঁর অভিষেকের আগেই তিনি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের মীমাংসা করবেন। সাম্প্রতিক সময়ে, তাঁর সহকারীরা বলেছেন তিনি তাঁর মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনে, অর্থাৎ এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ একটি শান্তি চুক্তির আশা করছেন।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়, যুক্তরাষ্ট্র ছিল ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সামরিক সাহায্যদাতা। ট্রাম্প প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রশ্নে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি গত বছর এক রাজনৈতিক বিতর্কে ইউক্রেনকে যুদ্ধে জয়ী দেখতে চান, এ’কথা বলতে অস্বীকার করেন।
এখন মনে হচ্ছে ট্রাম্প চাইছেন ইউরোপ যাতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য বেশির ভাগ সামরিক এবং আর্থিক দায়িত্বভার গ্রহণ করে। তিনি এমনটাও বলেছেন যে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য অব্যাহত রাখার বিনিময়ে ইউক্রেনকে দূষ্প্রাপ্য আর্থ খনিজ আমেরিকাকে দিতে হবে। এই খনিজ পদার্থ প্রযুক্তি দ্রব্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয়।
“এই (ইউক্রেন) কন্ট্যাক্ট গ্রুপের সদস্যদের এই মুহূর্তটিকে উপলব্ধি করতে হবে,” হেগসেথ ৫০টি সদস্য রাষ্ট্রের সমবেত গ্রুপকে বলেন। এই গ্রুপ ২০২২ সালে রুশ আগ্রাসনের পর থেকে ইউক্রেনকে ১২,৬০০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র এবং সামরিক সহায়তা দিয়েছে।
“আমরা আপনার কথা বুঝতে পারছি,” ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি হেগসেথের উদ্বোধনী বক্তব্যের জবাবে বলেন। হেগসেথ বলেন নেটো সদস্যদের প্রতিরক্ষা খাতে তাদের ব্যয় তাদের জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে নেটো-ভুক্ত কোন দেশ এই পরিমাণ অর্থ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ করে না।
যুক্তরাষ্ট্র ৩.৪ শতাংশ বরাদ্দ করছে। নেটো দেশগুলোর মধ্যে পোল্যান্ড সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয় – ৪.১২ শতাংশ। বর্তমানে প্রতিরক্ষা খাতে নেটোর ব্যয়ের লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিটি সদস্য দেশের জাতীয় আয়ের ২ শতাংশ, যে লক্ষ্য ৩২টি দেশের মধ্যে ২৩টি অর্জন করছে। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২১) নেটো-ভুক্ত দেশগুলোকে এই বিষয়ে সমালোচনা করার পরে ২০২১ সালে ছয়টি দেশ লক্ষ্য অর্জন করছিল।
হেগসেথ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ৫ শতাংশ ব্যয় নিয়ে কোন অঙ্গীকার করেননি। তিনি বলেন এ’ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প। “আমরা আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে আছি,” হেগসেথ বলেন, এবং করদাতাদের ডলার নিয়ে দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজন আছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা প্রধান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আর কখনো একটি ভারসাম্যহীন সম্পর্ক (নেটো সদস্যদের মধ্যে) সহ্য করবে না, যা যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতায় উৎসাহ দেয়; বরং, আমাদের সম্পর্ক ইউরোপের ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেবে, যাতে তারা নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরা নেয়।” নেটোর নেতারা জুন ২৪-২৬ তারিখে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে তাদের পরবর্তী শীর্ষ বৈঠকে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবেন।