ঢাকা | |
সংবাদ শিরোনাম :
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য ‘অবিলম্বে’ আলোচনার জন্য ট্রাম্পের প্রত্যয় কেনেডি হত্যার কয়েক হাজার নথির সন্ধান পেয়েছে এফবিআইন আয়নাঘর অনেক পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে : আযমী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলছেন, ইউক্রেনের ২০১৪ থেকে হারানো এলাকা ফিরে পাওয়ার আশা 'অবাস্তব' জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ১৪০০ জন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি ৭ দিনের রিমান্ডে জুলাই অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচল, এখন থেকে ট্রেন চলবে যমুনা রেল সেতু দিয়ে

পাকিস্তানে সাইবার অপরাধ আইনের সংশোধনী নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্বেগ

পাকিস্তান, তাদের ভাষায়, ভুয়া খবরের ব্যাপক প্রবাহ আটকানোর উদ্দেশ্যে ডিজিটাল অপরাধ আইন সংশোধন করার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তবে
  • আপলোড সময় : ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ১২:৩৬ সময়
  • আপডেট সময় : ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ১২:৩৬ সময়
পাকিস্তানে সাইবার অপরাধ আইনের সংশোধনী নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্বেগ
পাকিস্তান, তাদের ভাষায়, ভুয়া খবরের ব্যাপক প্রবাহ আটকানোর উদ্দেশ্যে ডিজিটাল অপরাধ আইন সংশোধন করার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তবে গণমাধ্যম অধিকার গোষ্ঠীগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যদি এই সংশোধনীগুলো পাস হয়, তা হলে সাংবাদিক ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদেরকে আইনগত পদক্ষেপের ঝুঁকিতে ফেলে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হবে।

পাকিস্তান ইলেকট্রনিক ক্রাইমস অ্যাক্ট (২০২৫) বা পেকা নামে পরিচিত আইনের নতুন এই সংশোধনীগুলো ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৭,০০০ ডলারেরও বেশি জরিমানার কথা বলা হয়েছে।

যেসব কন্টেন্ট কর্তৃপক্ষ ব্লক করতে পারবে তাদের সংজ্ঞা সংশোধনীগুলোতে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং অনলাইন কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য চারটি নতুন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে সোমবার সংশোধনীটি অনুমোদন লাভ করেছে, এবং এখন সেটা সেনেটে পাস করার অপেক্ষায় রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশটির দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে সংশোধিত বিলটি পাস হয় যখন বিরোধী দলের সদস্য ও সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করে বেরিয়ে যান।

ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি নায়ার আলী বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা এটাই দেখাচ্ছে যে এই বিষয়কে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে পরিণত করা হচ্ছে।

আইনের নাম পেকা

মূলত পেকা নামে পরিচিত পাকিস্তান ইলেকট্রনিক ক্রাইমস অ্যাক্ট (২০১৬)করা হয়েছিল সাইবার অপরাধ, অনলাইন হয়রানি এবং সহিংসতা প্ররোচিত করতে পারে এমন ঘৃণ্য বিষয়বস্তু বিস্তার রোধের উদ্দেশ্যে।
গণমাধ্যম ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো আইনটিকে “নির্মম” আখ্যা দিয়ে বলেছে, আগের সরকাররাও ভিন্নমতাদর্শীদের দমনের জন্য এই আইনকে ব্যবহার করেছে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা গ্রুপগুলি বলছে, ২০১৭ সালে পেকা আইনে পরিণত হওয়ার পর সাংবাদিক এবং মিডিয় কর্মীদের তদন্ত করা হয়েছে এমন ২০০’শর বেশি ঘটনা তারা রেকর্ড করেছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের এক বছর পূর্তির কয়েকদিন আগে আইনটিতে সর্বশেষ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। গত বছরের নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ উঠে।

অন্যতম জনপ্রিয় নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারাগারে রয়েছেন এবং তার দল নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

তবে তার সমর্থকরা একটি শক্তিশালী অনলাইন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন যদিও বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল নেতার নাম উচ্চারণ করা থেকে বিরত থাকছে।

“রাষ্ট্র ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধারার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে,” গত কয়েক বছরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিক আরিফা নূর বলেন। “এর ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রিপোর্টিং এবং আলোচনা সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে গেছে, এবং সেকারণেই তারা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার পিছনে লাগছে।”

“তারা একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং তারা একে বশে আনতে চায়," তিনি বলেন।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইনডেক্সে পাকিস্তানের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫২তম। ফ্রিডম হাউস ইন্টারনেটের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অবস্থানকে “স্বাধীন নয়” বলে অভিহিত করেছে।

সংশোধনী নিয়ে আশঙ্কা

জাতীয় সংসদে অনুমোদিত পেকা (২০২৫) এ বেআইনী কনটেন্ট-এর সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে যেসব মিথ্যা ও ক্ষতিকারক তথ্য, যা বিচার বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী, সংসদ বা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যসহ কোনও ব্যক্তির খ্যাতি ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।
এতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেশনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য “ব্যক্তি”র সংজ্ঞাটিও প্রশস্ত করা হয়েছে।

সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর জন্য ভিন্নমতাদর্শীদের দমন করা এবং বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করা সহজ হবে।

পাঞ্জাব প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী আজমা বুখারি এই উদ্বেগকে “অযৌক্তিক” বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

“সামরিক বাহিনী ও দেশের অংশ,” তিনি বলেন। “যদি প্রতিষ্ঠানটির কারও উপর আপত্তি থাকে তবে কি তাদের আপত্তি করা উচিত নয়?”

বেসামরিক বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ভূমিকা এবং রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগে নিয়মিতভাবে অনলাইনে সমালোচনার মুখে পড়ার পর এই সংশোধনী আনা হয়। তবে এই অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে। সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার “ডিজিটাল সন্ত্রাসবাদের”বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

নূর বলেন, “আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো শক্তিশালী সিভিল আইন বা নাগরিক আইন যা মানহানিকে একটি নাগরিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করবে।

সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, “ মিথ্যা বা নকল এবং সাধারণ জনগণ বা সমাজে ভয়, আতঙ্ক বা বিশৃঙ্খলা বা অস্থিরতার পরিবেশ সৃষ্টি করা বা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে” এমন তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচার করলে সেই ব্যক্তির তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সাত হাজার ডলারের বেশি জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

“ভুয়া খবর কী? তার ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা তারা বোধ করেননি,” বলেন সাংবাদিক নুর। “যেসব তাদের পছন্দ না, সেগুলোকে তারা ভুয়া খবর বলতে চায়।”

সাংবাদিক সংগঠনগুলো বলছে, সংশোধিত আইনের প্রভাব কেবল মাত্র সামাজিক মাধ্যমের জন্য যারা কনটেন্ট সৃষ্টি করেন তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

“ সব গণমাধ্যমই এখন ডিজিটাল,” বলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি আলী। মূলধারার গণমাধ্যম ও বিশিষ্ট সাংবাদিকরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে এমন তথ্য দেন, যেগুলো টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার হলে রাষ্ট্র থেকে চাপ আসতো।

নতুন ক্ষমতা

বিলটিতে ডিজিটাল প্রটেকশন অথরিটি, সোশ্যাল মিডিয়া কমপ্লেইন কাউন্সিল, সোশ্যাল মিডিয়া প্রটেকশন ট্রাইব্যুনাল এবং জাতীয় সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন অথরিটি প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি কেবল সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যাবে, যার ফলে প্রাদেশিক উচ্চ আদালতে ঐতিহ্যগত আপিল করার প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাবে।

বুখারি, যিনি এআই-এর সৃষ্টি করা প্রচারণার লক্ষ্যবস্তুতে হয়েছিলেন, তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে পাকিস্তানে এমন একটি আইন দরকার।

“যারা ভুয়া খবর দিয়ে থাকেন তাদের এই আইনকে ভয় পাওয়া উচিত,” তিনি বলেন। “ যারা ভারসাম্য রেখে খবর প্রচার করেন তাদের চিন্তা করা উচিত নয়।”

তবে নুর বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা যখন পরস্পরবিরোধী তথ্য দেন, যা মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর কারণ হয়, তখন সাংবাদিকরাও বেকায়দায় পড়ে যান।

কিছু সাংবাদিক সংগঠন বলেছে তারা ডিজিটাল জগতের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সমর্থন করে, কিন্তু তারা তড়িঘড়ি করে আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস করিয়ে সেনেট কমিটির অনুমোদন নেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছে।

সংশোধনীর ভীতিকর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, পাকিস্তানের স্বতন্ত্র হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে সংবাদিকাদের সংগঠনের সাথে আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে, দেশের মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর জোট জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি “মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ না করে পাস করা এবং অনুমোদন দেয়া পেকা’র সংশোধনী প্রত্যাখ্যান” করেছে।

মঙ্গলবার পাকিস্তান ফেডেরাল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টস সাড়া দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভের ডাক দেয়।
  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: স্টাফ রির্পোটার।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প

গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প