ঢাকা | |
সংবাদ শিরোনাম :
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য ‘অবিলম্বে’ আলোচনার জন্য ট্রাম্পের প্রত্যয় কেনেডি হত্যার কয়েক হাজার নথির সন্ধান পেয়েছে এফবিআইন আয়নাঘর অনেক পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে : আযমী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলছেন, ইউক্রেনের ২০১৪ থেকে হারানো এলাকা ফিরে পাওয়ার আশা 'অবাস্তব' জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ১৪০০ জন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি ৭ দিনের রিমান্ডে জুলাই অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচল, এখন থেকে ট্রেন চলবে যমুনা রেল সেতু দিয়ে

নির্মাণের ২০ বছর পেরুলেও অচলাবস্থায় ফেনী ট্রমা সেন্টার!

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে ফেনীর মহিপালে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়। মহাসড়কের ফেনী অংশের ১৬
  • আপলোড সময় : ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ১০:৩৭ সময়
  • আপডেট সময় : ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ১০:৩৭ সময়
নির্মাণের ২০ বছর পেরুলেও অচলাবস্থায় ফেনী ট্রমা সেন্টার!
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে ফেনীর মহিপালে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়। মহাসড়কের ফেনী অংশের ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক।

জানা যায়, ২০০২ সালের ৯ মে ফেনী ট্রমা সেন্টারের তিনতলাবিশিষ্ট ভবনের কাজ শুরু হয়। এক একর জায়গার ওপর ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০০৬ সালের ৩০ জুলাই। আর ৩০ অক্টোবর ট্রমা সেন্টারের বহির্বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়। ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সেন্টারটি প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে। দীর্ঘ ২০ বছরেও চালু হয়নি ফেনী ট্রমা সেন্টার।

প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি এবং জনবলসংকটে খুঁড়িয়ে চলছে সেন্টারের সেবা কার্যক্রম। ফেনী ট্রমা সেন্টারে রয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ), অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, প্যাথলজির জন্য আছে উন্নতমানের যন্ত্রপাতিও। কিন্তু নেই সেগুলোর চালিকা শক্তি বিদ্যুৎ সংযোগ। রোগী এবং চিকিৎসকদের জন্য নেই পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও। এভাবেই অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে ফেনী ট্রমা সেন্টার। কোনোভাবে চালু আছে শুধু বহির্বিভাগের সেবা। দুরাবস্থা দেখলে মনে হয় যেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নিজেই ‘ট্রমায়’ ভুগছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়া মূল উদ্দেশ্য হলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের ফেনী জেনারেল হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত ৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে ট্রমা সেন্টারের বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে অবহিত করে ও ২০ শয্যাবিশিষ্ট ট্রমা সেন্টার চালুর জন্য প্রয়েজনীয় জনবলের চাহিদা জানিয়ে একটি আবেদন পাঠান সিভিল সার্জন ডা. সিহাব উদ্দিন।

দেশের চারটি ট্রমা সেন্টারের মধ্যে একমাত্র ফেনী ট্রমা সেন্টার চালু আছে। কিন্তু সেখানে নেই পর্যাপ্ত জনবল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ফেনীর মহিপালে ২০০৪ সালে নির্মাণ করা হয় ট্রমা সেন্টারটি। ২০০৬ সালের ৩০ অক্টোবর ট্রমা সেন্টারের বহির্বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ফেনীর ২০ শয্যাবিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারে অনুমোদিত পদ ২০টি। এর বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১০ জন। তাদের মধ্যে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিষ্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি) ও সাতজন নার্স আছেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (এ্যানেসথেসিয়া) পদে একজনকে পদায়ন করা হলেও তাকে ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে পাঠানো হয়েছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো সার্জারি), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি), একজন নার্স, ড্রাইভার, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ওয়ার্ড বয়, আয়া, ল্যাবরেটরি এসিস্ট্যান্ট, অফিস সহায়ক পদ শূন্য রয়েছে।

এছাড়া দারোয়ান ও সুইপারসহ তিনজন আউটসোসিং পদ শূন্য রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে সিভিল সার্জন ২০টি পদের বিপরীতে মানসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ৩১ জনের জনবলের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন।

ট্রমা সেন্টারের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সাইফুল আলম জানান, এখানে প্রতিদিন বর্হিঃবিভাগে সাধারণত ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দিকাশিতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ছোটখাটো আহত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কখনো হাড়ভাঙা ও দুর্ঘটনায় আক্রান্ত আশঙ্কাজনক রোগী এলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন রোগী বর্হিঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

সরেজমিনে ফেনী পৌর শহরের মহিপাল সংলগ্ন ট্রমা সেন্টারটিতে দেখা যায়, লোকবল না থাকায় ট্রমা সেন্টারের এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফি, জেনারেটর এবং অপারেশন থিয়েটার ও প্যাথলজি ল্যাবের প্রায় সব যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় রোগীদের শয্যা রয়েছে। নিচতলায় এক্স-রে কক্ষ ও ল্যাব। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করায় নষ্ট হচ্ছে এক্স-রে ও ল্যাবের যন্ত্রপাতি। একদিনও ব্যবহার করা হয়নি যন্ত্রপাতিগুলো। দোতলা ভবনটির অধিকাংশ কক্ষই ছিল বন্ধ।

ট্রমা সেন্টার-সংলগ্ন মহিপাল এলাকার বাসিন্দা নুরুল আফছার বলেন, প্রতিদিন মহিপালের ওপর দিয়ে হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, টেম্পো, অটোরিকশা চলাচল করে। প্রায়ই দুর্ঘটনায় লোকজন আহত হয়। কিন্তু ট্রমা সেন্টারে গিয়ে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। কখনো পাওয়া গেলেও তারা চিকিৎসা না দিয়েই ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

ফেনী ট্রমা সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাইফুল আলম জানান, এক্স-রে যন্ত্রটি গত ১৬ বছরে একবারও ব্যবহার করা হয়নি। একটি ইসিজি যন্ত্র থাকলেও পেপার না থাকায় ব্যবহার করা হয় না। দুটি অ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র কখনো ব্যবহার হয়নি। একটি অটোক্লেভ (জীবাণুমুক্তকরণ যন্ত্র) যন্ত্র বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) কিছু যন্ত্রপাতি দেওয়া হলেও ওটি চালু করা হয়নি। দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছে। এগুলো ভালো আছে নাকি নষ্ট হয়ে গেছে— সেটা তো না দেখে বলা যাবে না।

ফেনীর মহিপাল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুনুর রশীদ বলেন, গত এক বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক। সড়কের পাশে নির্মিত ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমে আসত।  ট্রমা সেন্টারটি চালু না হওয়ায় দুর্ঘটনার শিকারদের ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠাতে হয়। এতে করে রোগীর রক্তক্ষরণ ও গুরুতর রোগীদের অনেক সমস্যা হয়। অনেক সময় মারাও যায়। মহাসড়ক থেকে সদর হাসপাতালের দূরত্ব ৫  কিলোমিটার। কিন্তু শহরের যানজট পেরিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়।

ফেনী জেলা সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন বলেন, জনবল ও অবকাঠামো-সংকটের কারণে বর্তমানে শুধু বহির্বিভাগ সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। সংকটের কথা একাধিকবার লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছ।
  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: স্টাফ রির্পোটার।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প

গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প