ঢাকা | |
সংবাদ শিরোনাম :
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য ‘অবিলম্বে’ আলোচনার জন্য ট্রাম্পের প্রত্যয় কেনেডি হত্যার কয়েক হাজার নথির সন্ধান পেয়েছে এফবিআইন আয়নাঘর অনেক পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে : আযমী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলছেন, ইউক্রেনের ২০১৪ থেকে হারানো এলাকা ফিরে পাওয়ার আশা 'অবাস্তব' জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ১৪০০ জন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি ৭ দিনের রিমান্ডে জুলাই অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচল, এখন থেকে ট্রেন চলবে যমুনা রেল সেতু দিয়ে

‘টু ডব্লিউ’র বন্ধুত্ব কেন শত্রুতায় পৌঁছেছিল

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বন্ধু কি?’ উত্তর দিয়েছিলেন নিজেই, ‘এক আত্মার দুইটি শরীর।’ পাকিস্তান ক্রিকেটও এমন বন্ধুত্ব
  • আপলোড সময় : ২১ জানুয়ারী ২০২৫, বিকাল ৫:২৩ সময়
  • আপডেট সময় : ২১ জানুয়ারী ২০২৫, বিকাল ৫:২৩ সময়
‘টু ডব্লিউ’র বন্ধুত্ব কেন শত্রুতায় পৌঁছেছিল ছবি : সংগৃহীত
গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বন্ধু কি?’ উত্তর দিয়েছিলেন নিজেই, ‘এক আত্মার দুইটি শরীর।’ পাকিস্তান ক্রিকেটও এমন বন্ধুত্ব দেখেছিল। ক্রিকেট লেখক যারা আছেন তারা প্রায়ই দুজনকে শিখরে রাখেন। বন্ধুত্বের প্রশ্নে আবার তলানিতেও ঠেলে দেন। বলা হয়, বন্ধু যখন শত্রু হয় তখন তার চেয়ে বেশি খারাপ শত্রু হতে পারে না কেউ! ‘টু ডব্লিউ’ খ্যাত ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিসের গল্পটাও এমনই।

দুজনের দহরম-মহরম সম্পর্ক একসময় রূপ নেয় দা-কুমড়ায়। তিক্ততা এমন হয়ে পড়েছিল যে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড যেকোনো একজনকে ড্রেসিংরুমের বাইরে রাখতে চাইত। দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক জন ক্রেস ২০১৫ সালে শুনিয়েছিলেন তাদের কাহিনী। ব্যক্তিগতভাবে দুজনের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল ক্রেসের। দুজনের সম্পর্কে ফাটল দেখে তিনি নিজেও অবাক হয়েছিলেন।

নব্বইয়ের দশকে যত পেস জুটি ছিল তাদের মধ্যে সবার আগে থাকত ওয়াকার-ওয়াসিম জুটি। সমর্থক কিংবা প্রতিপক্ষরা তাদের আদর করে ডাকত ‘টু ডব্লিউ’। ওই সময়ে বোলিংয়ে রাজ করছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালান ডোনাল্ড-শন পোলক, অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা-ডেমিয়েন ফ্লেমিং এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যামব্রোস। কিন্তু তাদের ছাপিয়ে পাকিস্তানকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়েছিলেন টু ডব্লিউ জুটি।

দুই প্রান্ত থেকে দুজনের তাণ্ডবে চোখে সরষে ফুল দেখত প্রতিপক্ষ দল। ওয়াকার-ওয়াসিমের সেই গতি আর সুইং এখনও জগদ্বিখ্যাত। একসময় ‘সুলতান অব সুইং’ খ্যাত ওয়াসিমকে দেখতে পারত না ওয়াকার। তবে তারা কেউ কাউকে মাঠের মাঝেই দোষারোপ করত না।

জন ক্রেস তার নিবন্ধে লিখেছেন, ‘টু ডব্লিউর মাঝে বাজে ধরনের শত্রুতা ছিল। কিন্তু শুরুতে তাদের মাঝে দারুণ বন্ধুত্বও ছিল। শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসাও দেখেছি। পরে তারা কঠিন বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। ওয়াকার ও ওয়াসিমের সম্পর্ক এক পর্যায়ে এতটাই তিক্ত হয়ে ওঠে যে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও (পিসিবি) বিরক্ত হয়ে পড়েছিল। ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সালের কিছু সময় আগপর্যন্ত তাদের ঝগড়া পাকিস্তান ক্রিকেটকে বেশ ক্ষতির মুখে ফেলেছিল। আগে থেকেই দুজনকে চিনতাম। যখন আমি ১৯৯২ সালে ওয়াসিম এন্ড ওয়াকার: ইমরানস ইনহেরিটরস বই লিখেছি, তখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম। শুনলে বিশ্বাস করবেন না, তারা দুজন এমন আচরণ করছিলেন যেন তারা রক্তসম্পর্কের ভাই। তবে আমি সত্যিটা জানতাম।’

কয়েক বছর আগে ওয়াসিম আকরাম স্বীকার করেছিলেন সম্পর্ক শীতলতার কথা, ‘তখন বয়স অল্প ছিল। ২৪-২৫ বছর বয়স আমাদের। ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ শীতল ছিল, এটা অস্বীকার করব না। কিন্তু তারপরও আমরা কিন্তু কেউই একে অন্যের মন্দ কামনা করতাম না। চাইতাম দুজনই যেন ভালো করি। একজন ৫ উইকেট পেলে অন্যজনও ৫ উইকেট পেতে চাইতাম। একে অন্যকে পারফরম্যান্স দিয়ে ছাড়িয়ে যেতে চাইতাম। প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা সব সময়ই স্বাস্থ্যকর ছিল। কিন্তু মুড এদিক-ওদিক হতো।’

সেই মুড নিয়ে অনেক হ্যাপা পোহাতে হয় পাকিস্তানকে। ১৯৯৯ সালে দিল্লিতে একবার ড্রেসিংরুমে দুজনের প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। ঝামেলা এতদূর গড়িয়েছিল যে পাকিস্তানের বোর্ডকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। কথা উঠেছিল, সিরিজের মাঝপথেই দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ওয়াকারকে। ওয়াসিম ও ওয়াকার পরে স্বীকার করেছিলেন দুজনের বৈরি সম্পর্কের কারণে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল।

বহু ম্যাচ তারা দুজনে একসঙ্গে মিলে জিতিয়েছেন, তবে খেলা চলাকালে একটিবারের জন্যও কথা বলেননি। দুজনে হাত পর্যন্ত মেলাননি। এমনকি ওয়াসিম যখন নেতৃত্বে আসেন তখন ওয়াকারকে একাদশেই রাখতে চাইতেন না। ততদিনে উত্থান হয়ে গেছে শোয়েব আখতারের। পেস বোলিং অলরাউন্ডার আজহার মাহমুদ, অধিনায়ক ওয়াসিম আর শোয়েব—তিন বোলার নিয়ে সাজানো একাদশে ওয়াকার থাকতেন কালেভদ্রে। টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলেও ওয়াসিম ততদিনে নিজের রাগ মেটানোর বড় সুযোগ পেয়ে বসেছিলেন। পাকিস্তানের বোর্ড হস্তক্ষেপ করেও তাদের বন্ধুত্ব করাতে পারেনি।

তবে তাদের তিক্ততার শুরু কবে থেকে এবং ঠিক কি কারণে টু ডব্লিউর সম্পর্কে অবনতি, তা এখনও অজানা। যদিও দুজনের এখনকার সম্পর্ক বেশ দারুণ। সেই সময়ে গতি আর সুইংয়ে প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দেওয়া জুটি একসঙ্গে পাকিস্তানকে জিতিয়েছে বহু ম্যাচ। একসঙ্গে তারা যে ৫৬ টেস্ট খেলেছেন, তাতে ২২.৩৯ গড়ে নিয়েছেন ৪৭৬ উইকেট। ওয়ানডে ক্রিকেটেও আছে বহু স্মৃতি।

তিক্ত অধ্যায় পেছনে ঠেলে এখন একই সঙ্গে অনুষ্ঠান করছেন, কখনও কোনো পণ্যের শুভেচ্ছাদূত হয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে কখনো সে সময়ের রাইভালরি নিয়ে কেউ কিছু বলেননি। পাকিস্তান ক্রিকেটে তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটের খোঁজখবর রাখেন, এমন যে কারোরই মনে বড়সড় একটা জায়গা দখলে করে থাকবেন এই টু ডব্লিউ জুটি।

  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ডেস্ক।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প

গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প