ঢাকা | |

অনেক মানুষকে মশা বেশি কামড়ায় কেন, মুক্তির উপায়

বর্ষার জমা পানিতে উপদ্রব বাড়ে মশার। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দিনে দিনে। বর্তমানে ডেঙ্গুর ধরন
  • আপলোড সময় : ৫ আগস্ট ২০২৩, সকাল ৯:১০ সময়
  • আপডেট সময় : ৫ আগস্ট ২০২৩, সকাল ৯:১০ সময়
অনেক মানুষকে মশা বেশি কামড়ায় কেন, মুক্তির উপায়

বর্ষার জমা পানিতে উপদ্রব বাড়ে মশার। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দিনে দিনে। বর্তমানে ডেঙ্গুর ধরন বদলে গিয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের রোগের তীব্রতা, জটিলতা এবং মৃত্যুর হার এবার সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে ডেঙ্গুর লক্ষণের ধরনগুলোও বদলে গিয়েছে। যেসব মশা আগে বাড়ি ঘরে জন্ম নিতো বা বসবাস করত, সেগুলো ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়াত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বন্য মশাও এডিসের বাহক হয়ে গেছে। বর্তমানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আবাসিক এবং বন্য দুই মশাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাদেরকে খুব মশা কামড়ায়। একসঙ্গে অনেক জন বসে থাকলেও মশারা ওই লোকদেরই বেছে বেছে কামড়ায়। কখনও কি ভেবে দেখেছেন কেন এটা হয়? আসলে এর জন্য দায়ী আমাদের ত্বকের গন্ধ। ত্বকের গন্ধের পার্থক্যের কারণে ওই লোকজন মশাদের জন্য ধারাবাহিকভাবে বেশি আকর্ষণীয়। একটি নতুন গবেষণাতে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

মশা সাধারণত ফল-মূল ও লতা-পাতার রস খায়। তবে ডিম ফোটাতে স্ত্রী মশার অতিরিক্ত প্রোটিনের দরকার হয়। তখন তারা মানুষসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্ত খেতে হুল ফোটায় বা কামড়ায়। তবে ভয়ের কথা হলো, কামড়ের মাধ্যমে তারা পরজীবী ও ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। এতে করে যত ধরনের অসুখ হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু।

গবেষণায় দেখা গেছে যে মশারা কিছু নির্দিষ্ট লোককে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে, বাকিদের তুলনামূলকভাবে অক্ষত রেখে যায়। গবেষণায় রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায় যে মশার প্রতি অত্যন্ত আকর্ষণীয় লোকেরা তাঁদের ত্বকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করেন। এই অ্যাসিডগুলো ত্বকের প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজিং স্তরের অংশ। বিভিন্ন মানুষের মধ্যে এই অ্যাসিড তৈরির পরিমাণ বিভিন্ন হয়। আর মশারা সেটাই পার্থক্য করতে পারে। আমাদের শরীর থেকে নির্গত ওই অ্যাসিডের একটি অনন্য গন্ধ মশাদের আকর্ষণ করে। তাই অনেক জনের মাঝে কিছু লোককে মশার কামড় বেশি খেতে হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যে সমস্ত মানুষের ত্বকে কার্বক্সিলিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা থাকে, তাদের প্রি খুব বেশি আকৃষ্ট হয় মশা। এসব এডিস ইজিপ্টি মশাই জিকা এবং ডেঙ্গুর মতো রোগ ছড়ায়।

মানুষের ত্বকে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে থাকে। তবে সেটি তেমন খারাপ কিছু নয়। যদিও এই ব্যাকটেরিয়াই মশাদের মানুষের শরীরেরে কাছাকাছি আসতে আমন্ত্রণ জানায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, বিশেষ কিছু ব্যকটেরিয়া যুক্ত মানুষ মশাদের বেশি পছন্দ। তবে যাঁদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে, তাদের মশার আক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে।

জানা গিয়েছে যে, মশারা ‘ও’ ব্লাড গ্রুপের মানুষের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। ২ নম্বরে রয়েছে ‘এ’ ব্লাড গ্রুপের মানুষ। এই দুটি রক্তের গ্রুপই মশার জন্য চুম্বকের মতো কাজ করে।

মশা প্রায়শই মাটির কাছাকাছি বংশবৃদ্ধি করে। আর মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য গন্ধ এবং দৃষ্টিশক্তির ব্যবহার করে। তাই সম্ভব হলে হালকা রঙের পোশাক পরে বের হওয়া উচিত।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি কফি বা চা খান বা তাদের বেশি মশার কামড় খেতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাফেইনের কারণে মেটাবলিজমের মাত্রা বেড়ে যায় এবং সেক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, মশা সহজেই উষ্ণ ত্বকের দিকে আকৃষ্ট হয়।

মশা শরীরের ঘাম এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড পছন্দ করে। তাই শরীর চর্চার পর সবসময় স্না করে নেওয়া উচিত। এছাড়া, ওয়ার্কআউট শুরু করার আগে চারপাশে পোকামাকড় প্রতিরোধক ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়।

একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মশারা বিয়ার পান করা মানুষের রক্ত বেশি ​​পছন্দ করে। তাই যতটা সম্ভব বিয়ার এড়িয়ে চলুন। আর কোনও পার্টিতে যদি বিয়ার থাকে, তাহলে সেখানে দ্রুতগতির পাখার ব্যবস্থা রাখুন।

ত্বকে রাসায়নিক দেওয়া ‘রেপেলেন্ট’ ক্রিম মাখানোও ভাল নয়। বেশি ক্ষণ মশা তাড়ানোর ধূপ জ্বালানো যাবে না। তা হলে মশার উপদ্রব থেকে কী ভাবে বাঁচবেন? রাতে মশারির ভিতর ঘুমোলেও দিনের বেলা মশার ধূপ, ক্রিম, স্প্রে— নানা উপায়ে মশা তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। তার উপর মশার ধূপ বা তরল ওষুধ দীর্ঘ ক্ষণ জ্বালিয়ে রাখাও ভাল নয়। বিশেষ করে যদি ঘরে কোনও বাচ্চা থাকে। বাচ্চাদের ত্বকে রাসায়নিক দেওয়া ‘রেপেলেন্ট’ ক্রিম মাখানোও ভাল নয়। তা হলে কী ভাবে বাঁচা যায় মশার উপদ্রব থেকে? রয়েছে কিছু ঘরোয়া উপায়।

সিট্রনেলা অয়েল

ভাল সংস্থার ফিনাইলে অন্যতম একটি উপাদান হল সিট্রনেলা অয়েল। দিনে দুই থেকে তিন বার ঘর মোছার জলে মিশিয়ে নিতে পারেন এই প্রাক়তিক তেল। আবার গায়ে মাখার ক্রিমেও এই তেল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে মাখা যেতে পারে। শিশুদের ত্বকের জন্যেও তা নিরাপদ।

কর্পূর

মশার ধূপ সারা দিন না জ্বালাতে চাইলে ঘরের কোণে কর্পূর রাখতে পারেন। যে টেবিলে বসে সারা দিন কাজ করছেন বা খাটের পাশে রাখা টেবিলে রেখে দিতে পারেন, কিছুটা কাজ দেবে। এখন তো বিদ্যুৎ চালিত ‘বার্নার’ কিনতে পাওয়া যায়। সেখানেও কর্পূর রেখে দিতে পারেন।

ইউক্যালিপটাস অয়েল

প্রচুর মশা তাড়ানোর স্প্রে’র মূল উপাদান লেমন ইউক্যালিপটাস তেল। আমেরিকার ‘সিডিসি’ এটিকে মশার তাড়ানোর অন্যতম উপায় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই এসেনশিয়াল অয়েল স্প্রে করা যেতে পারে। আবার গায়ে মাখার ক্রিমে কয়েক ফোঁটা এই তেল মিশিয়েও মাখতে পারেন। অনেক ক্ষণ মশা দূরে থাকবে।

কীটনাশক

কয়েক ধরনের কীটনাশক বাড়ি থেকে মশা তাড়াতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা সর্বদা ১৫ শতাংশ ডিইইটি যুক্ত কীটনাশক ব্যবহারেরই পরামর্শ দেন।

লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার

লেবু খণ্ড করে কেটে ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর মধ্যে লবঙ্গের পুরোটা ঢুকাবেন শুধুমাত্র লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে থাকবে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে ঘরের কোণায় রেখে দিন। ব্যস, এতে বেশ কয়েকদিন মশার উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

ফ্যান চালান

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে থাকলে কত জন আর ফ্যান চালান। কিন্তু ঘরে জোরে ফ্যান চালিয়ে রাখলেও গায়ে খুব একটা মশা বসার সুযোগ পায় না। ফ্যানের জোর হাওয়ায় মশা খুব একটা উড়তে পারে না।

পানি জমতে দেবেন না

বাড়ির আশেপাশে বেশি পা‌নি জমে থাকলে বাড়িতে মশাও বেশি হবে। ছাদের কোণে ব়ৃষ্টির জল জমছে কিনা খেয়াল রাখুন। বাথরুমে অহেতুক পানি জমিয়ে রাখবেন না। যদি রাখতেই হয়, ঢাকনা দেওয়া বালতি ব্যবহার করুন। বাগান, বারান্দা বা ছাদে কোনও খালি গাছের টব রাখা থাকলে সেগুলো উল্টে রাখুন। বাড়ির বাইরে ময়লা ফেলার বালতি থাকলে সেগুলিতে পা‌নি জমে থাকছে কি না খেয়াল রাখুন।

ক্যাটনিপ অয়েল

বিড়াল-প্রিয় মানুষেরা ক্যাটনিপ তেলের কথা শুনে থাকবেন। বিড়ালদের ভাল রাখতে অনেকেই এই তেল ব্যবহার করেন। তবে তাদের জানা নেই, এই তেল মশা তাড়াতেও সাহায্য করে। যাদের ক্যাটনিপ গাছে অ্যালার্জি রয়েছে, তারাও এই তেল নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন।

হলুদ বৈদ্যুতিক আলো

ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে চাইলে, ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। ফলে হলুদ আলো হবে। দেখবেন মশা কমে গেছে, কারণ মশা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে চায়।

পিপারমেন্ট অয়েল

অনেকেই মশা তাড়াতে ঘরের কোণে পিপারমেন্ট অয়েলযুক্ত সুগন্ধি মোম জ্বালান। তবে এই এসেনশিয়াল অয়েল আপনি গায়েও মাখতে পারেন মশা কামড় থেকে বাঁচতে। তবে সরাসরি পিপারমেন্ট অয়েলে গায়ে লাগালে র‌্যাশ বেরোতে পারে। তাই নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে লাগান।

নিমের তেলের ব্যবহার

নিমের মশা তাড়ানোর বিশেষ একটি গুণ রয়েছে। নিমের তেল ত্বকের জন্যও বেশ ভালো। তাই একসাথে দুটি উপকার পেতে ব্যবহার করতে পারেন নিমের তেল। সমপরিমাণ নিমের তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন। দেখবেন মশা আপনার ধারে কাছে ভিড়বে না এবং সেই সাথে ত্বকের অ্যালার্জি, ইনফেকশন জনিত নানা সমস্যাও দূর হবে।

রসুনের স্প্রে করুন

রসুনের স্প্রে মশা তাড়াতে খুবই কার্যকারী প্রাকৃতিক উপায়। ৫ ভাগ পানিতে ১ ভাগ রসুনের রস মেশান। মিশ্রণটি একটি বোতলে ভরে শরীরের যেসব স্থানে মশারা কামড়াতে পারে সেসব স্থানে স্প্রে করুন। এতে করে যে কোন ধরণের রক্ত চোষারা আপনার ধারে কাছেও আসবে না।

চা-পাতা পোড়ান

ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ওই চা পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে।

  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: স্টাফ রির্পোটার।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স
বায়ুদূষণে শীর্ষে বাগদাদ, ঢাকার অবস্থান কত

বায়ুদূষণে শীর্ষে বাগদাদ, ঢাকার অবস্থান কত