মস্কো শহরে জীবন আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও যুদ্ধের ধাক্কা মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যা তিন বছর ধরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে স্পষ্ট না হলেও, কিছু কিছু ঘটনা এই যুদ্ধকে খুব কাছ থেকে অনুভব করিয়ে দেয়।
মঙ্গলবার (১৭ডিসেম্বর) সকালে মস্কোতে ঘটে গেল একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। রাশিয়ার নিউক্লিয়ার, বায়োলজিক্যাল এবং কেমিক্যাল ডিফেন্স ফোর্সের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কিরিলভ এবং তার সহকারী ইলিয়া পোলিকারপভ এক ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহত হন। ইলেকট্রিক স্কুটারে লুকানো একটি বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে তাদের হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ড কেবল রাশিয়ার যুদ্ধের বাস্তবতাকে সামনে এনেছে, বরং সাধারণ মানুষের কাছে ভয় এবং অস্বস্তির অনুভূতিও নিয়ে এসেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা লিজা বলেন, "খবরের মধ্যে যুদ্ধ দেখতে একরকম লাগে, কিন্তু যখন আপনার পাশের ভবনে এমন ঘটনা ঘটে, তখন সেটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। যুদ্ধ এতদিন দূরের কোনো বিষয় মনে হয়েছিল। এখন সেটা এখানে এসেছে। প্রতিটি শব্দ আমাকে আতঙ্কিত করে তুলছে।"
রাশিয়ার জনগণের একটি বড় অংশ যুদ্ধকে যেন টেলিভিশন বা স্মার্টফোনের পর্দায় দেখা একটি ভার্চুয়াল বিষয় হিসেবেই অনুভব করছে। অথচ, রাশিয়ার বড় সংখ্যক সৈন্যের মৃত্যুর পরও অনেকেই এই ভয়াবহতার কাছাকাছি আসেনি। কিন্তু কিরিলভের হত্যাকাণ্ড রাশিয়ার জনগণের জন্য একটি কঠিন বার্তা নিয়ে এসেছে: যুদ্ধ এখন তাদের দুয়ারে।
এই ঘটনা রাশিয়ার সরকারি নীতিতে পরিবর্তন আনবে কি না, সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বরং, রাশিয়া এই ঘটনায় আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোর সম্ভাবনা বেশি। কিরিলভের হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে রাশিয়ার টিভি উপস্থাপকরা বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নিজের মৃত্যুদণ্ড স্বাক্ষর করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ হামলাকারীদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং কিয়েভের "পৃষ্ঠপোষকদের" ধ্বংস করার কথা বলেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, তিনি আগেও বলেছেন যে রাশিয়া সবসময় যেকোনো নিরাপত্তা হুমকির জবাব দেবে। বৃহস্পতিবার(১৮ডিসেম্বর) প্রেসিডেন্টের বার্ষিক প্রেস কনফারেন্সে হয়তো এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে।
কিরিলভের হত্যা রাশিয়ার রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতাকে নতুনভাবে প্রকাশ করেছে। এই হত্যাকাণ্ড রাশিয়ায় যুদ্ধের ভয়াবহতা কতটা ঘনিষ্ঠ হয়ে এসেছে, তা দেখিয়েছে। মস্কোর স্বাভাবিকতার আবরণ ছিন্ন করে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি