রংপুর মহানগরীর প্রেসক্লাব বিপনী বিতানে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীকে মারধোরের ঘটনায় প্রেসক্লাবের সামনে ৩ ঘন্টা অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে মার্কেট মালিক সমিতি অপরাধীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষনা দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত এই অবরোধের কারণে নগরীর মুল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিপনী বিতানের দ্বিতীয় তলায় ক্যান্ডি গেজেট নামের একটি মোবাইলের দোকানের মালিক আশিক এবং তার কর্মচারীরা মিলে বেধড়ক মারপিট করে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহদী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সৌরভ এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের জামশেদকে। এসময় তারা তাদেরকে মোবাইল চোর হিসেবে আটক করে ১০ হাজার করে টাকা জরিমানা আদায়েরও চেষ্টা চালায়। তাদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে মারপিটের শিকার শিক্ষার্থী জামশেদ আলী জানান, মাস দুয়েক আগে ওই দোকান থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরোনো মোবাইল কিনেছিলেন মাহাদী। কিন্তু মোবাইলটি নষ্ট হওয়ার কারণে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও মেরামত করে দেয়ার সহযোগিতা করছিল না আশিক। কেনার সময় শর্ত ছিল, যদি মেরামত করে না দিতে পোরে তাহলে ২০ ভাগ কমিশন দিয়ে বাকী টাকা ফেরত দিবে। কিন্তু আশিক মোবাইলটি মেরামতও করে দিচ্ছিল না।
আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছিলো না। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বন্ধুদেরসহ ওই দোকানে এসে টাকার দাবি করলে দোকানি আশিক তাদের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে ওই দোকানসহ আশেপাশের দোকানীরা মিলে তাদের বেধড়ক মারপিট করে। শুধু তাই নয়, এসময় তারা শিক্ষার্থীদের আটকে রাখে এবং ১০ হাজার করে টাকা না দিলে মোবাইল চোর হিসেবে চালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী প্রেসক্লাবের সামনে এসে অবরোধ গড়ে তোলেন রাত সাড় ৮ টা থেকে। এরই মধ্যে বিপনী বিতানের সব দোকানপাট বন্ধ করে চলে যায় দোকানীরা। তারা রাস্তার দুইপাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
অবরোধকালে সেখানে বক্তব্য রাখেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রহমত আলী। এসময় তিনি বলেনএকটি অদৃশ্য শক্তির জোড়ে প্রেসক্লাব বিপনী বিতানে গড়ে উঠা একটি সিন্ডিকেট এভাবে গ্রাহক হয়রানি করছে। অধিকাংশ মোবাইলের দোকানে চোরাই এবং ছিনতাই করার মোবাইল বেচাবিক্রি হয়। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদেরকে চোর ট্যাগ দিয়ে জরিমানা আদায় করে। আমাদের ভাইদের মারধোরের পর আটক করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়েরও চেস্টা করছে। এই সিন্ডিকেটের সাথে যারা জড়িত এবং মারধোরকারী সবাইকে আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত এই বিপনী বিতান বন্ধ থাকার ঘোষণা দেন তিনি। এসময় পুলিশ দেরিতে আসার অভিযোগও করেন তিনি।
একপর্যায়ে সেখানে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নেতৃত্বে ফেরদৌস রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষকরা। সেখানে উপস্থিত হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী। তাদের উপস্থিতিতে মার্কেট মালিক সমিতি মারধোরকারীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত মার্কেট বন্ধ রাখার শর্ত মেনে নিলে রাত সাড়ে ১১ টায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়।
এদিকে হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে যান ভিসি। তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তিনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রংপুর মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ শিবলী কায়সার জানান, খবর পাওয়ার আধাঘন্টার মধ্যেই কোতয়ালী থানার ওসির নেতৃত্বে সেখানে পুলিশি আসে। তারা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার চেস্টা করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ থাকায় তাদের সাথে কথা বলা যাচ্ছিল না। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তাদের সাথে আমরা কথা বলি। মার্কেট মালিক সমিতি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষনা দেন এবং গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত মার্কেট বন্ধ রাখার অঙ্গিকার করলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন। আমরা ঘটনাটি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু এবং গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছি।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যারয়ের প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আহত শিক্ষার্থীদের আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এব্যাপারে মামলা করা হবে। অপরাধীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত প্রেসক্লাব বিপনী বিতান বন্ধ থাকবে।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. শওকাত আলী জানান, আহত শিক্ষার্থীদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আমি নিজে তাদের কাছে গিয়ে চিকিৎসার খোঁজ খবর নিয়েছি। এ ধরণের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের মারধর করা আবার তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের চেষ্টায় যতবড় সিন্ডিকেটই থাকুকনা কেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।