ঢাকা | |

ট্রাম্পের ফিরে আসায় ভারত-বাংলাদেশের রাজনীতি কতটা আশঙ্কাজনক

ডনাল্ড ট্রাম্প আর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অতীতের সম্পর্ক কি দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে? নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে
  • আপলোড সময় : ৭ নভেম্বর ২০২৪, দুপুর ১০:১০ সময়
  • আপডেট সময় : ৭ নভেম্বর ২০২৪, দুপুর ১০:১০ সময়
ট্রাম্পের ফিরে আসায় ভারত-বাংলাদেশের রাজনীতি কতটা আশঙ্কাজনক
ডনাল্ড ট্রাম্প আর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অতীতের সম্পর্ক কি দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে? নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের রসায়নই ইউনূস সরকারের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক?

৫ আগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই সরকার ও তার সংস্কার প্রক্রিয়ায় জো বাইডেনের নেতৃত্বে মার্কিন ডেমোক্র্যাট সরকারের আছে ব্যাপক সমর্থন।  আর সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, তার স্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে রয়েছে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক। ২০১৬ সালে হিলারিকে হারিয়ে যখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হন, তখন ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রেই ছিলেন। হিলারির পরাজয়ে তিনি আহত হয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তখন ড. ইউনূস বলেছিলেন, "মার্কিন নির্বাচন ভুল রাজনীতির শিকার হয়েছে।” তিনি ট্রাম্পকে নেতিবাচকতা পরিহার করে উন্নয়নের সম্পর্কের সেতু তৈরি করার কথাও বলেন। আর ওই নির্বাচনকে তুলনা করে সূর্যগ্রহণের সঙ্গে।

অন্যদিকে ট্রাম্পও ওই সময়ে ড. ইউনূস সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। বাংলাদেশি-অ্যামেরিকান একটি প্রতিনিধি দল  ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, "ঢাকার ক্ষূদ্রঋণওয়ালা কোথায়?” ট্রাম্প  তার শাসনামলে বাংলাদেশি নারী প্রিয়া সাহার অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তখন বাংলাদেশের প্রধানন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। আর সর্বশেষ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে ট্রাম্প তার এক্সে  বলেছেন," আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দেশটিতে দলবদ্ধভাবে তাদের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে একটি নৈরাজ্যকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে।''

সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলি বলেন, " ড. ইউনূসের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের হাইয়েস্ট লেভেলে সম্পর্ক আছে। সেটা কেনো সমস্যা করবে কিনা আমাদের তা খেয়াল রাখতে হবে। 
একটা বিষয় ঠিক যে, বাইডেন ইউনূসকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন ট্রাম্প সেভাবে দেবেন না। তবে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন নীতির যে খুব পরিবর্তন হবে তা-ও মনে করি না। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি  ট্রাম্পকে প্রভাবিত করতে পারেন। আর হাসিনা সরকারের পতনের পর মোদী হাসিনাকে সেখানে আশ্রয় দিয়েছেন। বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কেরও টানাপেড়েন চলছে।”

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.)  এম শহীদুল হক মনে করেন, "ইউনূস সরকার  চাপে তো পড়বেই। তবে ট্রাম্পের ব্যবসা-বাণিজ্যের নীতির দিক থেকে বাংলাদেশ বড় কোনো দেশ নয় তার কাছে। আমি যেটা আশঙ্কা করি, সেটা হলো, দিল্লির হয়ে যে চাপটি আসবে। ভারত  তার মাধ্যমে এটা করতে পারে।”

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, " ট্রাম্প তো মাইক্রো ক্রেডিট নয়, বড় বড় ব্যবসা নিয়ে কাজ করেন। তার দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বুঝতে হবে। যেখানে ব্যবসা আছে, সেখানে ট্রাম্প আছেন।” তার কথা, " মাইনরিটি রাইটসের ব্যাপারে ট্রাম্প শক্ত অবস্থানে থাকবেন  বলে মনে হয়। আর অন্যান্য বিষয়ে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যকেই গুরুত্ব দেবেন।”

"হিলারিকে হারিয়ে ট্রাম্প যে বার প্রথম প্রেসিডেন্ট হন, তখন আমি অ্যামেরিকায় ছিলাম। ড. ইউনূসও সেখানে ছিলেন। তখন তার মতো অনেকেই ভেবেছিলেন হিলারি জিতবেন। আর ইউনূস সাহেব যে হিলারি, তথা ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ছিলেন, সেটা তো ট্রাম্পের না জানার কথা না। সেটা হয়ত ট্রাম্প এখন মনে রাখবেন না। কিন্তু ইউনূসকে নিয়ে যে উৎসাহ ক্লিনটন, হিলারি বা জো বাইডেনের ছিল। সেই উৎসাহ তো ট্রাম্পের নিশ্চয়ই থাকবে না।”

এদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন, " ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। আর ড. ইউনূস এখন একটি সরকার প্রধান। ফলে অতীতের কোনো বিষয় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না।” তার কথা, " তবে বাংলাদেশকে নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র আছে আধিপত্যবাদী শক্তির। তারা নানাভাবে ট্রাম্পকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে। সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাই ইউনূস সরকারের উচিত হবে সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো দ্রুত শেষ করে নির্বাচন দেয়া।”

তবে জাতীয় পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাশরুর মাওলা বলেন, " আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের পলিসির পরিবর্তন হয় না। তবে ট্রাম্প তো ব্যবসায়ী।আবার  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক। সেই ক্ষেত্রে ইউনূস সাহেবের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কিছুটা সমস্যা হতে পারে।” "অ্যামেরিকায় ভারতের অর্থনীতি একটি বড় অর্থনীতি৷ ফলে মোদীর পক্ষে ট্রাম্পের ওপর প্রভাব বিস্তার সহজ হবে। তাই বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত কূটনীতিতে কাজ হবে না। আরো নতুন কৌশল নিতে হবে,” বলেন তিনি।

আর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন মনে করেন," যে হিসাবই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের জনগণকে বিব্রত করার ক্ষমতা কেউ রাখে বলে আমি মনে করি না। তাই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ায় সম্পর্কের হেরফের হবে বলে মনে করি না।”

"এই সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। এর জনভিত্তি আছে। আর বাংলাদেশ একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে এখানে একটি শক্তিশালী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে,” বলেন তিনি। ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তাকে ইতিমধ্যে শুভেচ্ছা ও অভিন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: স্টাফ রির্পোটার।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স
নাট্যাভিনেতা আনামিকা বিমানবন্দরে সোনাসহ আটক

নাট্যাভিনেতা আনামিকা বিমানবন্দরে সোনাসহ আটক