সাবেক হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে তার ডুপ্লেক্স বাড়ি, বাণিজ্যিক প্লট এবং কোম্পানি আছে।
বিএফআইউর তথ্যানুুযায়ী, নজরুল ইসলাম বাবু ও তার পরিবারের সদস্যরা চারটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মেসার্স সূচনা ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, মেসার্স স্টার ট্রেডিং কোম্পানি, মেসার্স বাবু এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স সূচনা ডায়িং প্রিন্টিং ওয়েবিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
দুদক সূত্র জানায়, বাবুর দুই ভাই, দুই ভগ্নিপতি, ভাগ্নে রাজীব, শাশুড়ি এবং দুই বন্ধুর কাছেও আছে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ। এক ভাই ও এক বন্ধুর নামে পরিচালিত ব্যবসার নেপথ্যেও আছেন তিনি। কেমিক্যাল পণ্য আমদানিকারক ও সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিত তারা।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের ৯৭ পার্সিয়ারাও দোতা, দোতা নুসানতারা শ্রী হাউতোমাস এলাকায় একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি কিনেছেন বাবু। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার ৩৩৩ টাকায় বাড়িটি কেনা হয়েছে। কুয়ালালামপুরের পেরিনডাসট্রেইন, নিলাই-২, সেরেমবানে নজরুল ইসলাম বাবু ও তার স্ত্রী সায়মা আফরোজ ইভার নামে আছে একটি বাণিজ্যিক প্লট। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ২ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩০ টাকায় প্লটটি কেনা হয়।
এ ছাড়া কুয়ালালামপুরে মাজু মুহিব্বাহ নামে নজরুল ইসলাম বাবুর একটি কোম্পানি আছে। আমপাং প্রদেশেও আছে বাবু ও তার স্ত্রীর সম্পদ।
এক আত্মীয়ের নামে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন বাবু। জানা যায়, বাবুর দেশে যত সম্পদ আছে, এর মধ্যে ঢাকার গুলশান-১ এ ৪ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। শান্তিনগরে ইস্টার্ন পিয়ারে আছে ১টি ফ্ল্যাট। রমনা থানার সিদ্ধেশ্বরীর আছে ২ হাজার ১৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট।
রাজউকে পূর্বাচল উপশহরে বাবুর আছে ১০ কাঠার প্লট।
৬১ বিজয়নগরে ইস্টার্ন আরজু নামে একটি ভবনের মালিক বাবু।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স-২ এ বাবুর আছে ৪টি দোকান
এই শপিং কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থিত ৪টি গোডাউনের মালিকও তিনি।
শান্তিনগরেও আছে একটি ভবন।
শেরেবাংলা নগরের ১৬৩ পূর্ব রাজাবাজারে বাবুর আছে আরও একটি ফ্ল্যাট।
সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ২৫ শতাংশ মালিকানা বাবু ও তার স্ত্রীর নামে।
জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রথম অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে নতুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নতুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান দুদক উপপরিচালক ওয়াকিল আহমেদ। অনুসন্ধান শেষে অব্যাহতির সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেন তিনি। এই প্রতিবেদন কমিশনে গৃহীত হয়। ২০১৮ সালের ৫ মার্চ নজরুল ইসলাম বাবুকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্য দিয়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। এরই অংশ হিসেবে ১১৮ জনের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। বিস্তারিত তথ্য জানতে বিএফআইইউর সহযোগিতা চাওয়া হয়। সহযোগিতা চেয়ে চিঠি পাঠান দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেন। ১১৮ জনের ওই তালিকায় এমপি বাবু ও তার স্ত্রীর নাম আছে।